জীবিত ফেরার অপেক্ষায় মা, দেশে ফিরেই বিয়ে করার কথা ছিল এমভি আবদুল্লাহর ফায়ারম্যান শাকিলের
চার মাস পরেই দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিলো সোমালি জলদস্যুদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিলের (২৪)। জলদস্যুদের হাতে আটকের পর তাকে ঘিরে পরিবারের সদস্যদের আশা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা গ্রামের শামছুল হক ও আনোয়ারা বেগমের ছোট ছেলে শাকিল। চার মাস আগে আবদুল্লাহ জাহাজে যোগ দেন তিনি। এ চাকরি তার পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছিল। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী এই সদস্যের জিম্মিদশায় আতঙ্কিত পুরো পরিবার।
জলদস্যুদের হাতে আটকের পর শাকিলের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সন্তানের জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন শাকিলের মা আনোয়ারা বেগম।
সোমালিয়ার জলদস্যুরা যখন এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়, তখনই বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের মোবাইল নম্বরে কল করেন মোশারফ হোসেন শাকিল। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) দুপুর দুইটা থেকে সর্বশেষ রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ২০ মিনিটের মতো তার কথা হয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। সর্বশেষ তিনি বলেন, 'আমার ফোন কিছুক্ষণের মধ্যে সোমালিয়ান জলসদ্যুরা নিয়ে নেবে। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
শাকিলের বড় ভাই আবু বকর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কাল কথা বলার সময় ভীষণ আতঙ্কিত ছিল শাকিল। ভয়ার্ত কণ্ঠে আমাদের জানায়, সোমালিয়ান জলসদ্যুরা তাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। সবাইকে একটি কক্ষে আটকে রেখেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সর্বশেষ রাত আটটার সময় কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে শাকিল। জীবিত ফিরে আসতে সবার কাছে দোয়া চায় সে। আমার বাবা, মা, পরিবারের সদস্যরা কেউই সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। আমরা সবাই তার জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি।'
আবু কবর বলেন, 'বাবা, মা, তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে উপার্জনক্ষম হচ্ছে শাকিল। আমার একটি ব্যবসা থাকলেও সেটি এখন নেই। আমার আরেক ভাই রবিউল হোসেন বিদেশি জাহাজে চাকরি করলেও এখন দেশে। তার এমন পরিণতিতে পরিবারের অর্থিক অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে যাবে। আমার ভাইয়ে চার মাস পরে দেশে ফেরার কথা ছিলো। দেশে ফিরলে তাকে বিয়ে করানোর পরিকল্পনা ছিল আমাদের।'
এদিকে সকাল থেকেই চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে কবির গ্রুপের অফিসে জিম্মিদের বিষয়ে খবর নিতে আসেন তাদের স্বজনরা। গ্রুপটির কর্মকর্তারা তাদের আশ্বস্ত করেন, সরকারসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ভাইয়ের খবর পেতে সকালে চট্টগ্রাম শহরে কবির গ্রুপের অফিসে ছুটে আসেন শাকিলের ভাই আবু বকরও।
আবু বকর বলেন, 'জাহাজটির মালিক কবির গ্রুপ থেকে বলা হয়েছে আপনারা ধৈর্য ধরেন। আমরা বিষয়টি দেখছি। জাহাজের নাবিকদের জীবিত উদ্ধার করতে সরকারসহ আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রাখছে।'
২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার কাছে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। গত রোববার মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছিল জাহাজটি। সোমবার জলদস্যুদের কবলে পড়ে এটি।