ঈদের আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত ব্যাংক হিসাব চালুর অনুরোধ
আইনগত জটিলতা নিরসনের আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর আদায় না করা এবং ঈদের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করার মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। একইসঙ্গে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে, সেগুলো পুনরায় চালুর নির্দেশনা দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের সংগঠনের পক্ষে সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন রোববার (৩১ মার্চ) গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)- এর প্রতি এ অনুরোধ জানান।
সম্প্রতি কর পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে এনবিআর।
হিসাব স্থগিত হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে— নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এবং প্রাইম ইউনিভার্সিটি।
এনবিআরের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আইন অনুযায়ী অ্যাকাউন্টগুলো ফ্রিজ করা হয়েছে। বকেয়া ট্যাক্সের পুরো টাকা না হলেও কিছু টাকা পরিশোধ করে প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করতে পারে; অ্যাকাউন্টগুলো চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। "
কর অঞ্চল-১১ থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হয়েছে। এই অফিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "যেসব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছে তারা ইতোমধ্যে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছে এবং কেউ কেউ আংশিক বা সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান করেছে।"
"শুধুমাত্র একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় টাকা দিতে চাইছে না। বাকিরা তেমন আপত্তি করেনি," যোগ করেন তিনি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দেওয়া সংক্রান্ত রিট আপিলের নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে আদালত কর্তৃক রায় দেওয়া হয়েছে। 'আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণের বিশদ বিবরণ আদেশের পূর্ণাঙ্গ পাঠ' এখনো প্রকাশিত হয়নি। তারপরও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর দেওয়ার জন্য চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। দুঃখজনকভাবে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।"
"পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং সে অনুযায়ী আয়কর দেওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কোনোরূপ সুযোগ না দিয়ে ঈদুল ফিতরের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা একটি অমানবিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রতীয়মান। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, উৎসব ভাতা ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করা সম্ভব হবে না।"
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০–এর ৪৪ (৭) ধারা অনুযায়ী 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না' বলে উল্লেখ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইন দিয়ে স্বীকৃত অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল থেকে কোনোরূপ অর্থ যেমন– উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠাতারা গ্রহণ করতে পারেন না, তেমনি আয়কর হিসেবে প্রদান করা বা অন্যভাবে ব্যয় করার বিষয়টিও বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবেই প্রতীয়মান। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং কর আইনের সাংঘর্ষিক বিভিন্ন ধারা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে পরিবর্তন করা জরুরি।"
"আইনগত জটিলতা নিরসনের পূর্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর আদায় না করা এবং ঈদের আগে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ব্যাংক একাউন্ট স্থগিত করার মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপ প্রত্যাহার ও অনতি বিলম্বে ভুক্তভোগী সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিতকৃত ব্যাংক একাউন্ট পুনরায় চালুর নির্দেশনা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি," যোগ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
জানা যায়, আয়কর পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় দেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেইসঙ্গে বকেয়া কর পরিশোধের জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছিল দুই ডজনের বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
এনবিআরের একটি সূত্রে জানা গেছে, মোট ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কর পরিশোধের জন্য চিঠি দিয়েছে এনবিআর। এরমধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো হলো– নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
এছাড়া কর পরিশোধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে।
জানা গেছে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার বরাবর ৪ মার্চ চিঠি পাঠান ঢাকা কর অঞ্চল-১১-এর উপ-কর কমিশনার মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া। চিঠিতে আয়কর আইন ২০২৩-এর ২১৪ ধারা মোতাবেক বকেয়া কর পরিশোধের জন্য বলা হয়।
২০০২-০৩ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ১৬ অর্থবছরে মোট ১৮০ কোটি ৫০ লাখ ৯৪ হাজার ৫৬৪ টাকা কর পরিশোধ করতে বলা হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিকে। সেইসঙ্গে তা ১৫ মার্চের মধ্যে পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কর প্রদানে ব্যত্যয় হলে আয়কর আইন ২০২৩-এর ২৭৫ ধারা অনুযায়ী জরিমানা আরোপসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয় এনবিআরের ওই চিঠিতে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, "কর পরিশোধের জন্য এনবিআর থেকে চিঠি পেলেও ব্যাংক হিসাব জব্দের বিষয়ে কোনো চিঠি এনএসইউকে দেওয়া হয়নি। মূলত ব্যাংক থেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। তাদের কাছ থেকেই ব্যাংক হিসাব জব্দের কথা প্রথম জানতে পারি। যেহেতু ভ্যাটের বিষয়টি এখনেও সুপ্রিম কোর্টে প্রক্রিয়াধীন, তাই আমরা আইনজীবীকে জানিয়েছি।"