চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পের নতুন ডিজাইন করবে কর্তৃপক্ষ
চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের নকশা পুনরায় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
র্যাম্প নামাতে গিয়ে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত 'দ্বিতল' সড়কের ৪৬টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ফলে শতবর্ষী গাছ কাটার পাশাপাশি পাহাড়ের ঢালও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে পরিবেশকর্মী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী এবং নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ প্রতিক্রিয়া জানায়। এরপর বিষয়টি পুনরায় পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সিডিএর চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এখানে ছোট ছোট গাছ কাটা পড়বে। শতবর্ষী কোনো গাছ কাটা পড়বে না। তবুও নাগরিক সমাজ শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। টাইগারপাস মোড়ের র্যাম্পের নকশা পুনরায় প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
সিডিএ চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৪ নভেম্বর ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন।
মূল অংশের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ না হওয়ায় যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র্যাম্প নির্মাণ করবে সিডিএ।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প জিইসি মোড়ের হোটেল দ্য পেনিনসুলার সামনে, দুটি টাইগারপাসে, চারটি আগ্রাবাদে, বন্দরসংলগ্ন ফকিরহাট এলাকায় একটি, নিমতলায় দুটি, চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় দুটি, কর্ণফুলী ইপিজেড-সংলগ্ন দুটি ও সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় একটি র্যাম্প থাকবে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের জুনে। এর মধ্যে পাঁচটি র্যাম্পের কাজ শুরু হওয়ায় বর্ধিত সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
টাইগারপাসের একটি পলোগ্রাউন্ড সড়কের দিকে নামবে। এজন্য গাছ কাটতে চায় সিডিএ। সিডিএর পক্ষ থেকে রেলওয়েকে জমি ব্যবহার ও গাছ কাটার অনুমিত চেয়েছে। এজন্য রেলওয়ের কাছ থেকে আগাম অনুমতি না নিয়েই র্যাম্প নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ ও সয়েল টেস্ট করা হয়েছে। এখন ৪৬টি গাছ কাটতে রেলওয়ের কাছে অনুমতি চাওয়া হচ্ছে। প্রায় এক মাস আগে বন বিভাগের কাছে গাছ কাটার অনুমতি চেয়েছে সিডিএ।
পাহাড় অক্ষুণ্ন রেখে ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ইউসুফ চৌধুরী সড়ক। এ সড়কের বিভাজক হিসেবে রাখা হয়েছে পাহাড়ের ঢাল। সড়ক বিভাজকে রিটার্নিং ওয়াল ছাড়াও লাগানো হয়েছে কয়েকশ ছোট-বড় গাছ। বেশকিছু গাছের বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। এসব গাছে নানা রকম পাখির বাসাও রয়েছে। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে শিরীষ, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, পেয়ারাও।
এই সড়কের গাছ কাটার প্রস্তুতির খবর জানা জানি হলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সোমবার দিনভর টাইগারপাস মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন করেন। তারা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্ববান জানায়।
সোমবার চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অনুপম সেনের নেতৃত্বে একদল নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা সিডিএর চেয়ারম্যান এম. জহিরুল আলম দোভাষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারাও গাছ কাটার এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন।