উৎপাদন বাড়াতে চট্টগ্রামে ২০ একর জমি কিনছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ
উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আমদানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে একটি ২০ একর শিল্প প্লট এলাকা কিনতে যাচ্ছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ।
সাবান, ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম থেকে শুরু করে ওয়াটার পিউরিফায়ার পর্যন্ত দেশে অন্তত ৮ ক্যাটাগরির পণ্যের বাজারজাতকরণ ও বিতরণ বাড়াতেই এই উদ্যোগ কোম্পানিটির।
শীর্ষস্থানীয় এই বহুজাতিক (ফাস্ট-মুভিং কনজিউমার গুডস— এফএমসিজি) প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, 'সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে ২০ একর পরিমাপের জমির সমস্ত অংশ বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে।'
ইউনিলিভার বাংলাদেশের জমি কেনার এই পরিকল্পনাটি কোম্পানির উৎপাদন সম্প্রসারণের প্রতিই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ চট্টগ্রামের কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় কোম্পানির প্রধান কারখানাটি তার সর্বোচ্চ সীমাতেই উৎপাদন করছে।
জমি কেনার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে ইউনিলিভারের গত প্রায় ৬০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের পদক্ষেপ।
তবে কোম্পানির কর্মকর্তারা বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান এবং পণ্যের বিবরণ এই মুহূর্তে প্রকাশ করতে রাজি নন। তারা বলেছেন, ইউনিলিভার তার সক্ষমতা বাড়াতে এবং বাজারের সুযোগ ধরে রাখতে প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে আসছে।
ইউনিলিভারের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপ অ্যান্ড কমিউনিকেশনস-এর ডিরেক্টর শামীমা আক্তার বলেন, "কোম্পানির সূচনা থেকেই আমরা আমাদের বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডগুলোর অধীনে বাংলাদেশের ভোক্তাদের জন্য বিশ্বমানের পণ্য সরবরাহ করে আসছি। আর এটি করতে গিয়ে আমরা প্রতিবছরই আমাদের বিনিয়োগ ও অপারেশনাল কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছি।"
ইউনিলিভার গ্লোবাল এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অংশিদারিত্বে ইউনিলিভার বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে, যার ৩৯.২৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব সরকারের এবং বাকি অংশ ইউনিলিভার গ্লোবালের। ১৯৬৪ সালে কেবল একটিমাত্র পণ্য— সাবান বাজারজাত করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ইউনিলিভার।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, আমদানির বিকল্প হিসেবে কোম্পানিটি বাংলাদেশে কিছু লিকুইড পণ্য তৈরি করতে বিনিয়োগের এই উদ্যোগ নিয়ে থাকতে পারে।
শামীমা আক্তার বলেন, "আমাদের আমদানি তালিকায় প্রাথমিকভাবে পিউরইট পোর্টফোলিও আইটেমের পাশাপাশি ময়শ্চারাইজিং ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু, লিকুইড ডিটারজেন্ট এবং কিছু বিশেষায়িত পণ্য রয়েছে; আমাদের কাঁচামালের মোটামুটি প্রায় ৮০ শতাংশই আমদানি করতে হয়।"
ইউনিলিভার বাংলাদেশের আমদানি করা পণ্যের মধ্যে ডোভ সাবান প্রধানত জার্মানি থেকে আসে। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয় বেশকিছু প্রিমিয়াম শ্যাম্পু। এছাড়া পন্ডসের কিছু পণ্য, তরল ডিটারজেন্ট এবং টয়লেট ক্লিনারও আমদানি করা হয়ে থাকে বলে এর আগে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছিলেন কোম্পানির সিইও জাভেদ আখতার।
শামীমা আক্তার জানান, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে কোম্পানিটি মোট ২৬টি ব্র্যান্ড নিয়ে ৮ ক্যাটাগরির পণ্য উৎপাদন, বাজারজাত ও বিতরণ করছে। বেশিরভাগ পণ্যই দেশের সাতটি স্থানীয় ফ্যাসিলিটিতে তৈরি করা হয়।
এর আগে ২০২০ সালে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর মাধ্যমে ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভি ২,০২০.৭৫ কোটি টাকায় গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) বাংলাদেশ লিমিটেডের ৮২ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।
জিএসকের শেয়ার অধিগ্রহণ ছিল ইউনিলিভার বাংলাদেশের বৈশ্বিক বিনিয়োগের একটি অংশ।
বর্তমানে ইউনিলিভার চট্টগ্রামে অবস্থিত জিএসকে ফ্যাক্টরিতে হরলিক্সসহ বেশকিছু স্বাস্থ্যকর পানীয় উৎপাদন করছে।
ইউনিলিভারের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর শামীমা টিবিএসকে বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের এফএমসিজি বাজারে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। সে সুযোগকে ধরতে ইউনিলিভার বাজারে কৌশলগত বিনিয়োগ করছে, গ্রিনফিল্ড ও ব্রাউনফিল্ড উভয় ক্ষেত্রেই। আমাদের বিনিয়োগ করার ক্ষমতা এবং বাজারের কৌশলগত সুযোগের ভিত্তিতে এ বিষয়গুলো টাইম-টু-টাইম পর্যালোচনা করা হয়।"
তিনি বলেন, ইউনিলিভার বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে মানসম্মত ও ভবিষ্যৎ উপযোগী পণ্য প্রবর্তন করে চলেছে।
শামীমা বলেন, "আমাদের প্রাথমিক মডেল ছিল আমদানির মাধ্যমে ব্যবসা শুরু এবং বাজার উন্নয়ন। কিন্তু চাহিদা যখন বড় পরিসরে দেখা দেয়, তখন আমরা স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে যাই।"
বছরে ৮% করে বাড়ছে স্থানীয় এফএমসিজি বাজার
মোট বিক্রয় মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশে এফএমসিজি বাজারের আকার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বা ৪০,০০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর বছরে দেশে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ।
এফএমসিজি ব্যবসায় দেশে আরও ৩০টির বেশি কোম্পানি প্রবেশ করলেও বাজারের ৫০ শতাংশের বেশি এখনও ইউনিলিভারের দখলে।
এদিকে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলেও মাথাপিছু এফএমসিজি খরচ অনেক দেশের তুলনায় এখানে কম।
এখানে এফএমসিজির মাথাপিছু খরচ ২৪ ডলার, যা ভারতের ৪৪ ডলার থেকে ৪৫ শতাংশ কম এবং ফিলিপাইনে এই খরচ ১০০ ডলারের বেশি বলে জানায় ইউনিলিভার।