সিমেন্ট শিট-ব্রেক শুতে ক্ষতিকারক অ্যাসবেস্টস, আমদানি-ব্যবহার বন্ধের দাবি
বাংলাদেশে তৈরি সিমেন্ট শিট ও গাড়ির ব্রেক শুতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অ্যাসবেস্টসের আমদানি, ব্যবহার ও বিপণন নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অকুপেশপনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভাইরনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি)।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ১১টায় রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ওশি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুর রশিদ চৌধুরী রিপন এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। গবেষণাটি ওশি ফাউন্ডেশন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার এশিয়ান সিটিজেন সেন্টার ফর এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড হেলথ (ইকো হেলথ)- এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়েছে।
গবেষণায় বাংলাদেশে তৈরি সিমেন্ট শিট, একটি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বেবি টেলকম পাউডার, গাড়ির ব্রেক শু ও সীতাকুণ্ডে জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকা থেকে সংগৃহীত মাটির নমুনা বিশ্লেষণ করে সিমেন্ট শিটে ৫০ শতাংশ ও ব্রেক শু'তে ১৫ শতাংশ ক্রিসোটাইল অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
তবে, বেবি টেলকম পাউডার ও সীতাকুণ্ড এলাকার মাটির যে নমুনা পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছিল তাতে অ্যাসবেস্টস পাওয়া যায়নি। যদিও আরও নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে জানান আমিনুর রশীদ চৌধুরী রিপন।
তিনি আরও বলেন, "বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ও আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার তথ্যানুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ শ্রমিক অ্যাসবেস্টস সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অ্যাসবেস্টস মিশ্রিত পণ্য সস্তা হলেও এর যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ– তা অনেক বেশি।"
সিমেন্ট শিটের পরিবর্তে টিনের ঢেউটিন ব্যবহারের তাগিদ দেন তিনি।
ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এস এম মোর্শেদ বলেন, "অ্যাসবেস্টসের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় বিশ্বের ৬২টি দেশে এর উৎপাদন, আমদানি ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তার জনগণের ক্যান্সার আক্রান্তের ঝুঁকি বিবেচনায় অ্যাসবেস্টসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে। প্রতিবেশি দেশ নেপাল এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও অবিলম্বে অ্যাসবেস্টস নিষিদ্ধ করা উচিত।"
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি হেলথ সায়েন্স এর ডিপার্টমেন্ট অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল হেলথ এর অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন ফারুকী বলেন, "অ্যাসবেসটস এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে কেউ যদি এর সংস্পর্শে আসেন, তার ২০ বছর পরে গিয়েও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।"
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অ্যাসবেস্টস নিষিদ্ধ করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বরের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
তারা অ্যাসবেস্টসের বিকল্প খুঁজে বের করার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।