গরমে অতিষ্ঠ মানুষ, ৩ দিনের তাপপ্রবাহ সতর্কতা জারি, তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই
প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ সারা দেশের মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাচ্ছে তীব্র ও মাঝারি তাপপ্রবাহ।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় গতকাল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দেশের ও মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল খুলনা বিভাগের সবকটি জেলাতেই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।
খুলনা বিভাগ ছাড়াও রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও পাবনা জেলায় বয়ে গেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এছাড়া ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ জেলায় বয়ে গেছে মাঝারি তাপপ্রবাহ।
এই পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার পরবর্তী তিন দিনের (৭২ ঘণ্টা) জন্য দেশে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল জানানো হয়, ১৯ এপ্রিল থেকে আগামী তিন দিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া এই সময়ে তাপমাত্রা না কমে বরং আরও বাড়তে পারে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
রাজধানী ঢাকাতেও বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপপ্রবাহ। শুক্রবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উল্লেখ্য, আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে উঠে গেলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে যে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে যে মৃত্যু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা-ও অব্যাহত থাকতে পারে।
এছাড়া কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ অঞ্চল এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে পারে বলে জানানো হয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল। এ মাসের শুরু থেকেই গরমে অতিষ্ঠ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
গত ১৫ এপ্রিল ৪৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পটুয়াখালীর কলাপাড়ায়, ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশজুড়ে তীব্র গরমে সবেচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষ। ফুটপাতের ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও গাড়িচালকদের সহ্য করতে হচ্ছে অসহ্য গরম।
টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গাসহ এ অঞ্চলের জনপদ। এ অঞ্চলের মানুষজন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। দিনমজুররা দুপুরের আগেই কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছেন।
এই তীব্র গরমে একটানা দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি জানান, এতে মাথাব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিটস্ট্রোক হয়। হিটস্ট্রোক হলে যে-কেউ মারাও যেতে পারেন।
এছাড়া গরমে পানিশূন্যতা পূরণে পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দেন ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ওরাল স্যালাইন খাওয়া ভালো। এছাড়া পানিতে লবন মিশিয়েও খাওয়া যাবে।
তবে রাস্তায় বিক্রি হওয়া লেবু পানি, আখের জুস খাওয়া যাবে না বলে সতর্ক করেন তিনি। অস্বাস্থ্যকর, বাসি কোনো খাবারও পরিহার করতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের যতটা সম্ভব ঘরে রাখতে হবে।
অপ্রোয়জনে বাইরে ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করে ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, যারা কাজের জন্য বাইরে থাকেন, তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। কারণ এসব রোগীর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।