জোড়া মাথা আলাদা করা দুই শিশু রাবেয়া-রোকেয়া সুস্থ আছে, জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জোড়া মাথা আলাদা করা জমজ দুই শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া সুস্থ আছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী দুই শিশুর চলমান চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং অস্ত্রোপচারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করেন।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মাথা জোড়া লাগানো জমজ সন্তান। এ ধরনের জমজ শিশুদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় 'ক্র্যানিওপেগাস টুইনস'। মাথা জোড়া লাগানো জমজ শিশু চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিকলতা। আড়াই মিলিয়ন জীবিত জমজ শিশুদের মধ্যে মাত্র একটি জোড়া মাথার শিশু জন্ম নেয়। প্রায় ৪০ শতাংশ জোড়া মাথার শিশু মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং আরও এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়।
আনুমানিক ২৫ শতাংশ শিশু জোড়া মাথা নিয়ে বেঁচে থাকে যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করার সুযোগ রয়েছে। তবে এর সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়।
এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই বিরল অস্ত্রোপচারটি প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের ১ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকায় ৩৩ ঘণ্টাব্যাপী সম্পন্ন হওয়া এই অস্ত্রোপচার বিশ্বে ১৭তম।
অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে জটিল অংশ 'জমজ মস্তিষ্ক' আলাদা করার কাজটি সম্পন্নের জন্য ২০১৯ সালের ২২ জুলাই রাবেয়া ও রোকেয়াকে ঢাকায় সিএমএইচে আনা হয়। পরে ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি এবং ১৩ মার্চ আড়াই ঘণ্টাব্যাপী আরও দুইটি অস্ত্রোপচার সিএমএইচে সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
এ অপারেশন দুটির মাধ্যমে তাদের মাথায় বিদ্যমান ক্ষতস্থান নতুন কোষ দিয়ে পূর্ণ করা হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রাবেয়ার মাথার বাম দিকের চামড়ার ক্ষত শুরু হয় এবং পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে চামড়ার নিচে লাগানো কৃত্রিম মাথার খুলি দৃশ্যমান হয়। এই জটিলতা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ২০২২ সালের ০৭ মার্চ ক্র্যানিওপ্লাস্টি সার্জারির মাধ্যমে সিএমএইচ ঢাকায় একটি সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। বর্তমানে রোকেয়া ও রাবেয়া দুজনই সুস্থ আছে।
এ অস্ত্রোপচারে দেশি ও বিদেশি চিকিৎসকসহ শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নেন।
এর আগে গত ২৪ এপ্রিল শিশু দুটিকে দেখতে সিএমএইচে যান ডা. সামন্ত লাল সেন এবং হাঙ্গেরি থেকে আসা চিকিৎসক দল।