রাজধানীতে ডিম, সবজি ও মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/05/17/92e3eee586c36ccd9fc678e8836e13eba095e6ac9bb02557.jpg)
রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম ডজনে আরও ১৫ টাকা বেড়েছে। সবজির দাম এখনও উর্ধ্বমুখী। আবার ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে গত বছরের তুলনায় মসলার দাম এবার প্রায় ৩০ থেকে ৪৭ শতাংশ বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত মাসজুড়ে টানা তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ডিম ও সবজির সরবরাহে সংকট রয়েছে। আবার ঈদুল আযহার কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম উর্ধ্বমুখী।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, গত মাসের গরমে কৃষকদের সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে চাহিদা অনুপাতে বাজারে সবজি আসছে না। কৃষক পর্যায়েই দাম বেশি। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বেড়ে যায়। বাজারে এখন কিছু মৌসুমি সবজি পর্যাপ্ত থাকার কথা থাকলেও সে পরিমাণে বাজারে আসেনি। সেগুলো বাজারে আসলে আশা করি দাম কমবে।
রাজধানীর শাহজাদপুর, বাড্ডা, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা। কোথাও কোথাও প্রতি ডজন ১৬৫ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকায়। অথচ একদিন আগেও বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকায়।
গত সপ্তাহে প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৪০-১৫০ টাকায় ও সাদা ডিম ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি আগের মতোই প্রতি কেজি ২১০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০ টাকায়।
এ বিষয়ে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার ক্রেতা মো. শরিফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'ডিম কিনলাম প্রতি ডজন ১৬৫ টাকায়। কয়েকদিন আগে ১৩০ টাকায় কিনেছি। প্রায় সব ধরনের সবজির দাম আকাশছোঁয়া। সরকার কয়েকদিন পর পর দাম নির্ধারণ করে দেয়, কিন্তু এটা ব্যবসায়ীরা মানেন না। বাজার তদারকির অভাবে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
এদিকে সবজির বাজারে এখনও উত্তাপ কমেনি। কাঁচামরিচ গত দুইদিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়।
এছাড়া মানভেদে বেগুন ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা এবং ধুন্দল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, পটোল ও ঢ্যাঁড়স ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রায় প্রতি বছরই কুরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের বাজারে এক-দুই মাস আগে থেকেই বাড়তে শুরু করে বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। এ বছরও এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ও বাড়ছে।
মসলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচের। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকায়।
এছাড়া আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন ২৩০-২৪০ টাকা, দেশি রসুন ২০০-২২০ টাকা, দেশি আদা ৪০০-৪৫০ টাকা এবং আমদানি করা আদা ২৫০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, হলুদ ৪২০-৫০০ টাকা, জিরা ৬৫০-৮৫০ টাকা, দারুচিনি ৫০০-৫৯০ টাকা, লবঙ্গ ১৫০০-১৮০০ টাকা, ধনে ১৪০-১৬০ টাকা এবং তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকায়।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) হিসেবে, গত এক বছরের ব্যবধানে রসুন ৩৬-৪৫ শতাংশ, হলুদ ৪৪-৪৬ শতাংশ, আদা ২৮ শতাংশ, দারুচিনি ১২ শতাংশ ও এলাচের দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।
মসলার দাম বাড়ার পেছনে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ টিবিএসকে বলেন, 'ডলারের দাম বাড়লে একদিকে আমদানি খরচ বেড়ে যায়। আবার অপরদিকে ডলারের বিপরীতে বাড়তি শুল্ক দিতে হয়। এখন আন্তর্জাতিকভাবেই মসলার বাজারেও হঠাৎ হঠাৎ দাম বাড়ে-কমে।'
সার্বিক বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন টিবিএসকে বলেন, মসলার দাম সবসময় দেখা যায় কুরবানির ঈদ আসলে এক-দুইমাস আগেই বেড়ে যায়। মসলার কিন্তু সংকট বাজারে দেখা যায় না। কিন্তু প্রতিবার দাম বাড়লেও তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ কারণে ব্যবসায়ীরাও এখন আর কাউকে তোয়াক্কা করছেন না। যে যার মতো দাম বাড়াচ্ছেন।