‘নীরব এলাকা’ সচিবালয়ের আশেপাশেই শব্দ দূষণ সবচেয়ে বেশি: সমীক্ষা
সরকার ঘোষিত 'নীরব এলাকা' বাংলাদেশ সচিবালয়ের আশেপাশের রাস্তাতেই ঢাকার শব্দ দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বলে উঠে এসেছে সেন্ট্রার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক পলিউশন স্টাডিস (সিএপিএস) পরিচালিত এক সমীক্ষায়।
সিএপিএস'র চেয়ারম্যান ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, "আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে সচিবালয়ের সামনে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হয়। সচিবালয়ের সামনের গুলিস্তান অভিমুখী রাস্তায় শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে আমরা এ তথ্য পেয়েছি। এই রাস্তা থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনও বেশি দূরে নয়।"
নিরাপদ নগর দিবস উপলক্ষে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশ এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ড. আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, "সচিবালয়ের সামনের রাস্তা— পল্টন মোড় থেকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায় ২০ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ ঘণ্টাই সহনীয় মাত্রার থেকে বেশি মাত্রায় শব্দ থাকে। জিরো পয়েন্ট এলাকায় আমরা সর্বোচ্চ ১১৫ ডেসিবল পেয়েছি শব্দের মাত্রা। এ এলাকায় গড়ে ৯০ থেকে ১০০ ডেসিবল মাত্রায় শব্দ থাকে।"
যদিও ২০০৬ সালের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলায় শব্দের মাত্রা থাকবে ৫০ ডেসিবেল এবং রাতের বেলায় ৪০ ডেসিবেল। নীরব এলাকায় নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে হর্ন বাজালে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচ্য হবে।
অন্যান্য এলাকার সঙ্গে তুলনা
ড. আহমেদ কামরুজ্জামান বলেন, "ঢাকায় উচ্চ শব্দ দূষণ ঝুঁকিতে থাকা জায়গাগুলোর মধ্যে শাহবাগে ৮০-৮৫ ডেসিবল, আব্দুল্লাহপুরে ৮৫-৯০ ডেসিবল, ৩০০ ফিট এলাকায় ৮০-৮৫ ডেসিবল, কারওয়ানবাজারে ৭৫-৮০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ থাকে।"
অপেক্ষাকৃত কম শব্দ দূষণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে— আবুল হোটেলের মোড়, বোটানিক্যাল গার্ডেন, পিলখানা, ক্যান্টনমেন্ট ও মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা। এসব এলাকায় তুলনামূলক কম মাত্রায় শব্দ দূষণ হয়। এরপরেও এসব এলাকায় শব্দের মাত্রা ৬৫-৭০ ডেসিবল।
ড. আহমেদ কামরুজ্জামান ঢাকার অন্যান্য দূষণ নিয়ে বলেন, "ঢাকা উত্তর সিটির তুলনায় দক্ষিণ সিটিতে তাপমাত্রা কম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ দক্ষিণ সিটিতে গাছপালার সংখ্যা এবং বয়স্ক গাছের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে বায়ুদূষণ কম। তবে ব্যবধান খুব বেশি নয়।"
সম্ভাব্য কারণ ও সমাধান
উত্তরে দূষণ বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে ঢাকা উত্তরের দিক থেকে। এখন মেগা প্রকল্পগুলো দক্ষিণ সিটিতে ঢুকছে সাথে সাথে দক্ষিণের দূষণও বাড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন তারা।
সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে বিশেষজ্ঞরা শব্দ দূষণ আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন।
সমীক্ষায় উচ্চ মাত্রার শব্দের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে যানজট বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর সমাধান হিসেবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করার।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনিও রাজধানী ঢাকার এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আইনের কঠোর প্রয়োগ, দুর্নীতি হ্রাস এবং সমস্যাগুলো কার্যকরভাবে সমাধানে শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন।
তাপস বলেন, "আমি মনে করি গুরুত্বপূর্ণ ৩টি সূচকে কাজ করতে পারলেই বাকি সূচক পূরণ হয়ে যাবে। প্রথমত, আমাদেরকে জাতিগতভাবে চেতনায় দুর্নীতি মুক্ত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। আর তৃতীয়ত, আইন বাস্তবায়নের জন্য বিচারালয়কে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাহলেই আমাদের কাজের মাধ্যমে শহরের বাসযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি পাবে।"
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক মো. সাইফুল আলম বলেন, "নগরের সংকট সমাধানে সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। গ্রাম হবে শহর, শহর হবে বাসযোগ্য, এই স্লোগানে যেতে হবে।"
অনুষ্ঠানে পাঁচটি বিভাগে ছয়জন সাংবাদিককে 'বেস্ট আরবান রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৪' প্রদান করা হয়। রিপোর্টাররা হলেন— নিউ এজ পত্রিকার রাশাদ আহমদ, দৈনিক বনিক বার্তার মো. আল ফাতাহ মামুন, দৈনিক সমকালের অমিতোষ পাল ও লতিফুল ইসলাম, সারাবাংলা ডট নেটের রাজনীন ফারজানা এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির মো. নাজমুল সাঈদ।