ঘূর্ণিঝড় রিমালে বাংলাদেশে ১০, ভারতে ৬ জন নিহত; লাখ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন
রোববার (২৬ মে) রাতে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এটি এখন স্থল নিম্নচাপ হিসেবে যশোরে অবস্থান করছে। রিমালের প্রভাবে বাংলাদেশে প্রতিকূল আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে বইছে দমকা ঝড়ো হাওয়া।
ঘূর্ণিঝড়ে প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও ক্ষয়ক্ষতির কথা জানা গেছে। বাংলাদেশে এপর্যন্ত ১০ জন এবং ভারতে ৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির তাণ্ডবে বিদ্যুৎ সরবরাহও বিচ্ছিন্ন হয় উভয় দেশের বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ গ্রাহকের।
প্রতিবছরই গ্রীষ্মকালে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, যা প্রায়ই বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন ভারতের উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়ে। এবছরের প্রথম বড় ঘূর্ণিঝড় রিমাল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরপৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়ছে। এতে গ্রীষ্মকালে আরো ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ছে এসব নিম্নাঞ্চল।
আবহাওয়া কর্মকর্তারা জানান, রোববার মধ্যরাতের দিকে বাংলাদেশের মোংলা বন্দর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ হয়ে অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। স্থলভাগে আঘাত হানার পর সোমবার সকাল ৯টায় ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ে।
ঝড়ের প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যাওয়ার পরে এখন উপকূলীয় এলাকাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন থেকে হতাহতের সংখ্যা আসছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান রয়টার্সকে জানান, এপর্যন্ত বাংলাদেশে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন সাইক্লোন শেল্টারে যাবার সময় নিহত হন। তবে প্রাণহানির সম্পূর্ণ তথ্য পেতে কর্তৃপক্ষের আরো সময় লাগবে।
মিজানুর বলেন, "লোকজন তাঁদের গবাদিপশু রেখে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না। তাঁরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে, এতে অনেক সময়েই (নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে) বেশি দেরী করে ফেলে।"
এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে মোট ছয়জন নিহত হওয়ার কথা জানা গেছে।
প্রাদেশিক রাজধানী কলকাতায় কংক্রিট পড়ে নিহত হন এক ব্যক্তি। আর পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এলাকার মৌসুনি দ্বীপে মাটির বাড়ি ধসে পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত
দুর্ঘটনা এড়াতে উপকূলের বেশকিছু অঞ্চলে ঝড় আঘাত হানার আগেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ উপড়ে পড়ার কারণেও– সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে রয়টার্সকে জানান বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার অধিবাসী রাহাত রাজা বলেন, "কাল রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই, আমার মোবাইলের চার্জ যেকোনও সময় ফুরিয়ে যাবে। এই সাইক্লোন যতোটা মারাত্মক হবে বলে আমরা ভেবেছিলাম– আল্লাহ'র দয়ায় ততোটা হয়নি।"
কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যুতের অন্তত ১,২০০ খুঁটি উপড়ে পড়েছে, ঝড়বৃষ্টির প্রকোপে ধসে পড়েছে ৩০০ মাটির ঘর।
তীব্র ঝড়ো বাতাসে অনেক বাড়ির টিন ও খড়ের ছাউনি উড়ে যায়। বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের বেশকিছু বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।
রিমালের কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেও। টানা বৃষ্টিতে নগরীর রাস্তাগুলোয় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে- চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
ভারী বৃষ্টিপাতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার অনেক রাস্তাও ডুবে গেছে। স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলের প্রচারিত সংবাদে বেশকিছু দেওয়াল ধসে পড়া এবং অন্তত ৫২টি গাছ উপড়ে পড়ার তথ্য জানানো হয়েছে।
এত দীর্ঘসময় ধরে চলা ঘূর্ণিঝড় আর কখনো দেখেননি বলে রয়টার্সকে জানান মোংলা এলাকার একজন মাঝি শাহ আলম। তিনি বলেন, "ঘূর্ণিঝড় সাধারণত কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে, কিন্তু গতকাল রাত থেকেই এই ঝড় হচ্ছে। জানি না কখন শেষ হবে।"
ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় এর আগে উপকূলে ৮ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছিল বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের সরকারি তথ্যমতে, ঝড়ের সময় প্রায় ৮ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এক লাখ ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয় বলে রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে।