দ্রব্যমূল্য সহনীয় থাকায় জনগণ রাস্তায় নামছে না: কৃষিমন্ত্রী
দুই অঙ্কের খাদ্য মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুস শহীদ বলেছেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় থাকায় মানুষ রাস্তায় নামছে না, মিছিলও করছে না।
সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, আলুর উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে, ডিমের দাম একটু বেশি। এছাড়া নাগরিকদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
যদিও ঢাকার বাজারে বর্তমানে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ৭৫-৮০ টাকা, মোটা চাল কিনতে হচ্ছে ৫২-৫৪ টাকায়, এক কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা ও গরুর মাংসের দাম ৭৮০-৮০০ টাকা কেজি এবং যে কোনো ধরনের সবজির কেজি ৮০ টাকা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনার জন্য সচিবালয়ে আজ সোমবার বৈঠকে বসেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন কৃষিমন্ত্রী।
সভায় তারা বলেন যে বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১০.২ শতাংশ।
টিসিবির বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে- পাইজাম চালের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। মোটা চালের কেজি ৫২ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ২.০৪ শতাংশ বেশি।
আরও দেখা গেছে, আটা ও সয়াবিন তেলের দাম কম হলেও এক বছরের ব্যবধানে মশুর ডালের দাম ১৩.১৬ শতাংশ, আলুর দাম ২৮.০৫ শতাংশ, দেশি রসুনের দাম ৩৮ শতাংশ, আমদানি করা রসুনের দাম ৫০ শতাংশ, দেশি আদার দাম ২৮.৭৯ শতাংশ ও ডিমের দাম ৩.১৬ শতাংশ বেড়েছে।
সভায় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর উপস্থাপনায় কলকাতার বাজারের সঙ্গে ঢাকার বাজারের যে ক'টি পণ্যের তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন করা হয়, ঢাকার বাজারে তার সবগুলোরই দাম বেশি।
যেমন- কলকাতায় সাধারণ মানের যে চাল ৪২.৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেটা ঢাকায় ৫০ টাকা, আটা কলকাতায় ৩৫.২৫ টাকা, যেটা ঢাকায় ৪০ টাকা, সয়াবিন তেলের দাম কলকাতায় ১৪৪ টাকা, যেটা ঢাকায় ১৬৩ টাকা।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে আগামীতে যাতে বাজার ব্যবস্থাপনা আরও সুন্দর করা যায়, সে বিষয়ে কাজ করার জন্য আমরা একমত হয়েছি। আজকের আলোচনায় ছিল বোরোতে চালের উৎপাদন ভালো হয়েছে, চালের কোন ঘাটতি নাই, দামও স্থিতিশীল আছে। আলুর উৎপাদন কিছুটা কম হয়েছে, আমদানি উন্মুক্ত আছে। পেঁয়াজের আমদানি উন্মুক্ত আছে, কোনো সমস্যা হবে না। ডিমের দাম কিছুটা বেশি। হিমাগারে ডিম মজুদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখানে তদারকি করা হবে, সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অবশ্য বেশিকিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলেও মনে করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থা উন্নত করে উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ব্যয় কমানো, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সাথে স্থানীয় মূল্যের যথাযথ সমন্বয় করা, অতিমুনাফা হ্রাস করা, বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করা, কৃষি পণ্যে সিজনাল ট্যারিফ আরোপ, যথাযথ ট্যারিফ আরোপ করে আমদানি উন্মুক্ত করা, বাজার মনিটরিং জোরদার এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সাবাদিকদের বলেন, 'আমরা বৈঠকে বসেছি যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে, ভোক্তারা যৌক্তিক মূল্যে পণ্য পায় এবং সরবরাহ চেইনে সমস্যা না হয়।
সভায় কৃষিমন্ত্রী অবশ্য চলমান ঘুর্ণিঝড়ে শাকসবজি, তরমুজ, গ্রীষ্মকালিন পেয়াজ ও টমেটো, পানের বরজ, আম-লিচুর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন।