বেসিকের সাবেক চেয়ারম্যান বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্র অনুমোদন
প্রায় ৯৫ কোটি টাকা আত্মসাত ও অর্থপাচারের অভিযোগে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে করা মামলার চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে কমিশনের সভায় এ চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০২৩ সালের ৩ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নুরুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন— বাচ্চুর স্ত্রী শিরিন আক্তার ও তার ভাই শেখ শাহরিয়ার পান্না, বাচ্চুর ছেলে শেখ রাফা হাই ও শেখ সাবিত হাই অনিক এবং হোটেল লা মেরিডিয়ানের মালিক আমিন আহমেদ।
দুদকের অনুসন্ধানে বলা হয়, আসামি বাচ্চু ২০১২ সালের ৮ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট বাজার এলাকায় ৩০ দশমিক ২৫ কাঠা আকারের একটি প্লট কেনার জন্য অপর আসামি আমিনের সঙ্গে চুক্তি করেন।
জমির মূল্য ১১০ কোটি টাকা হলেও দলিল বা চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময় ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন বাচ্চু।
দুদক বলছে, বাচ্চু তার অবৈধ আয় ধামাচাপা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশনে জমির মূল্য ৯৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কম দেখিয়ে ৮ কোটি ৫২ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাচ্চুর বিরুদ্ধে এটিই প্রথম চার্জশিট।
এর আগে ২০২৩ সালের জুনে, বেসিক ব্যাংকের ২ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রায় আট বছর আগে দায়ের করা ৫৯টি ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায় বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ অসংখ্য কর্মকর্তা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া, অতিমূল্যায়িত বা অস্তিত্বহীন বন্ধকের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। আসামিরা ঋণের নামে বেসিক ব্যাংক থেকে প্রায় ২ হাজার ২৬৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
আসামিদের মধ্যে বাচ্চু ও ব্যাংকের কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াসহ ৪৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৪৬ জন এবং ঋণগ্রহীতা ১০১ জন রয়েছেন। ৫৯টি মামলার মধ্যে ৫৮টিতে বাচ্চু ও শাহ আলম জড়িত।
মামলার প্রাথমিক প্রতিবেদনে তাদের নাম উল্লেখ না থাকলেও দুদক তদন্তকালে তাদের অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পর অভিযোগপত্রে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এর আগে এসব মামলার চার্জশিট দাখিলে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এক প্রতিবেদনে হাইকোর্টকে জানায়, কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎকৃত সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাচার করা অর্থের গতি পথ নির্ধারণ করতে না পারায় ফেরানো যায়নি বাকি এক হাজার কোটি টাকা।
২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে চার বছরে বেসিক ব্যাংকে ৪,৫০০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি হয়। টাকার অঙ্কে দেশের ইতিহাসে এককভাবে এটিই সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি।
২০১৫ সালে প্রাথমিকভাবে ৫৬টি মামলা এবং ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১৫৬ জনকে আসামি করে আরও তিনটি মামলা করে দুদক।