৩০ মে বন্ধ হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেন
ইঞ্জিন সংকটে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী একমাত্র ও বিশেষ ট্রেনটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ মে) থেকে ট্রেন বন্ধ রাখতে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে (ডিআরএম) চিঠি দিয়েছে রেলওয়ের যান্ত্রিক বিভাগ। ফলে বুধবার (২৯ মে) শেষবারের মতো জনপ্রিয় ট্রেনটি চলবে।
রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সংকটের কারণে ট্রেনটি বন্ধ রাখার চিঠি পেয়েছি। ৩০ মে থেকে ট্রেনটি বন্ধ থাকবে।"
রেলওয়ের পরিবহন ও যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, রেলের পূর্বাঞ্চলের বন্ধ থাকা অর্ধশতাধিক ট্রেনসহ মোট ২০০ ট্রেন পরিচালনায় ৩০০ ইঞ্জিন প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আছে ১৫৬টি ইঞ্জিন। এরমধ্যে আবার ১০০টি ইঞ্জিনও সচল নেই। তবে বর্তমানে ১১৬টির চাহিদা রয়েছে।
অন্যদিকে, রেলের দুই অঞ্চলের লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব-লোকোমাস্টার (এসএলএম) পদের সংখ্যা ২ হাজার ২৩৬টি। যার বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৮৫০ জন, যা ট্রেন চালানোর কাজে নিয়োজিত জনবল চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৩৮ শতাংশ।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে গত ৮ এপ্রিল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিশেষ ট্রেনটি চালু করেছিল কর্তৃপক্ষ। যাত্রী চাহিদা ও স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে ট্রেনটি চালু রাখার সময়সীমা ৩০ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছিল। নয় দশকের অপেক্ষার পর চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের রেলসংযোগ স্থাপনের বিষয়টি ডাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করাও হয়।
প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার রেলপথ গত বছরের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ডিসেম্বর থেকে দুই ধাপে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে দুটি বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করে রেলওয়ে।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চালু না হওয়ায় সমালোচনা মুখে, প্রতিটি ট্রেনের দুটি কোচে মাত্র ১১০টি আসন চট্টগ্রামের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
তবে যাত্রীদের চাহিদা ও দাবির প্রেক্ষিতে, গত ৯ মে ডিআরএমের দপ্তর থেকে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দপ্তরে বিশেষ ট্রেনটি নিয়মিত চালুর প্রস্তাব পাঠানো হয়। একটি ট্রেনকে দুই ট্রিপ অর্থাৎ দিনে দুইবার যাতায়াতের কথা বলা হয় প্রস্তাবে।
গত ৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত মোট ২৫ দিনে (৩ দিন চলাচল বন্ধ ছিল) ৫১ লাখ ২৫ হাজার ৩৬২ টাকার রাজস্ব আয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রস্তাবে। বিশেষ ট্রেনটির ১০টি বগিতে মোট ৪৩৮টি আসন ছিল। তবে যাত্রীর চাহিদা বিবেচনায় অতিরিক্ত বগি সংযোজন করে ৫০০-৫৫০ আসনের ব্যবস্থাও করা হতো। এরপরও যাত্রীদের চাহিদা থাকতো। নতুন প্রস্তাবে ১০ বগির পরিবর্তে ১৮টি বগি (৮৫০ আসন) সংযোজন করে বিশেষ ট্রেনটিকে নিয়মিত করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
কিন্তু নতুন প্রস্তাবটির অনুমোদন হয়নি জানিয়ে ডিআরএম সাইফুল ইসলাম জানান, প্রস্তাবটি বর্তমানে রেল ভবনে রয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে ১৯৩১ সালে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এরপর বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দীর্ঘ ৯২ বছর পর এ অঞ্চলে রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়। নতুন করে চট্টগ্রামের দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া এবং কক্সবাজারের হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও ঝিলংজা ৯টি স্টেশন নির্মাণ হয়।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের অন্তত আটটি উপজেলার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি এই রেলপথ এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করবে বলেও প্রত্যাশা করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চালুর বিষয় রেলওয়ের অনাগ্রহের কারণে উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দৈনিক গড়ে ৪০ হাজার মানুষ কক্সবাজারে যাতায়াত করে। এরমধ্যে ১০ হাজার যাত্রীও যদি ট্রেনে ওঠেন, তবে এটি হবে সবচেয়ে লাভজনক রুট।
দুর্ঘটনাপ্রবণ সড়কপথের চেয়ে রেলপথ তুলনামুলকভাবে নিরাপদ এবং ভাড়াও তুলনামূলক কম হওয়ায় এই রুটের ট্রেন জনপ্রিয়তা পায়।