৬ লাখ টাকা খরচ নিয়েও টিকিট দিতে পারছে না এজেন্সিগুলো, বিমানবন্দরে মালয়েশিয়াগামীদের ক্ষোভ
মালয়েশিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশী কয়েকশো ব্যক্তির কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত অভিবাসন খরচ নিলেও নির্ধারিত সময়ে তাদের টিকিট সরবরাহ করতে পারেনি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। তাই মালয়েশিয়া সরকারের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তারা সে দেশে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে এখন সংশয় তৈরি হয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তাদের টিকিট সরবরাহ করতে পারেনি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জানান, মালয়েশিয়া সরকার নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আজ শুক্রবারের (৩১ মে) মধ্যে তারা মালয়েশিয়া যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তাই তারা এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
বিমানবন্দরে কথা হলে নাটোরের সিংড়া উপজেলার মনিরুল ইসলাম জানান, তারা ২৪ জন একটি এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় রেস্টুরেন্টে কাজের জন্য নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের এক ব্যক্তির সাথে ৭ লাখ টাকা করে চুক্তি করেন। আজ সকালে তাদের মালয়েশিয়ার টিকিট দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকাল ৪টা বেজে গেলেও এজেন্সির কারোরই খোঁজ নেই।
তিনি জানান, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে ও নিজের জমি বিক্রি করে তিনি এজেন্সিকে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু শেষ সময়ে এসে যদি মালয়েশিয়া যেতে না পারেন, তাহলে তার বেঁচে থাকার পথ থাকবে না।
এদিকে বেশ কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে ভুয়া টিকিট সরবরাহেরও অভিযোগ উঠেছে। মালয়েশিয়াগামী কয়েকজন জানান, কিছু কিছু এজেন্সির পক্ষ থেকে তাদের ভুয়া টিকিট দেওয়া হয়। সে টিকিট নিয়ে তারা এয়ারপোর্টের ভেতরে প্রবেশ করেন। কিন্তু ভুয়া টিকিটের কারণে তাদের বের করে দেওয়া হয়।
আরমান শিকদার নামে মালয়েশিয়াগামী এক যাত্রী টিবিএসকে বলেন, 'সাড়ে ১১টায় একটি ফ্লাইটের কথা বলে ফ্লাইটের ঠিক ১০ মিনিট আগে টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু বিমানবন্দরে প্রবেশ করলে প্রয়োজনীয় যাচাইয়ের পর তাদের টিকিট ভুয়া বলে জানানো হয়।'
এছাড়াও শুরুতে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও, তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে আরও টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে।
আলী হোসেন নামে মালয়েশিয়াগামী এক অভিবাসনপ্রত্যাশী জানান, প্রথমে তাদের সাথে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তি হয়। কিন্তু প্রায় সাত লাখ টাকা নিয়েছে একটি এজেন্সি।
সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৭০ হাজার টাকা, ফিঙ্গারের জন্য কারো কাছ থেকে চার হাজার, কারো কাছ থেকে সাত হাজার করে টাকা নেওয়া হয়েছে।
নরসিংদীর হালিম একটি এজেন্সিকে মোট সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, পুরো টাকাটাই বিভিন্ন সমিতি ও গ্রামের মানুষের থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া। এখন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করলে তারা শুধু ঘোরাচ্ছে। সব টাকা ধার করে এ টাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন কি নিয়ে আমি বাড়ি ফিরে যাব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মালয়েশিয়াগামী যাত্রী জানান, ২৭ মে তাদের টিকিট দেওয়া হলেও ঝড়ের কারণে সে টিকিট বাতিল হয়। এরপর একাধিকবার টিকিট দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়নি।
তিনি বলেন, 'আমাদের কাছ থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় তাদের টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানাই। সর্বশেষ একটি এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করলে এটি জানায় যে টিকিটের দাম বেড়ে গেছে, তাছাড়া টিকিটও পাওয়া যাচ্ছে না।'
বিভিন্ন এজেন্সির সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাঁচ লাখ কোটার মধ্যে এখনো ১০ হাজারেরও বেশি কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি।
উল্লেখ্য, সরকার অভিবাসন ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিলেও এসব এজেন্সি বর্তমানে ৬ লাখ টাকা করে আদায় করছে।
এদিকে এক ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ অতিরিক্ত ফ্লাইট শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে।
এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে একটি বিশেষ অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
ওই ফ্লাইটে মোট ২৭১ জন যাত্রী পরিবহন করা হবে। ফ্লাইটটির যাত্রীদের নামের তালিকা, পাসপোর্ট নম্বরসহ প্রয়োজনীয় অঙ্গীকারনামা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) প্রতিনিধি বিমান জেলা বিক্রয় অফিস মতিঝিলে প্রদান করবে।
বায়রা প্রদত্ত তালিকা অনুসারে বায়রা প্রতিনিধি বিমান জেলা বিক্রয় অফিস মতিঝিল থেকে নগদ অর্থে উক্ত ফ্লাইটের টিকিট ক্রয় করতে পারবে।
যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিশেষ অতিরিক্ত ফ্লাইটের ভাড়া জনপ্রতি ৭৩ হাজার ৬১৬ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বায়রাকে জানানো হয়েছে।