গ্রাহকের চাবি ছাড়া লকার খোলার সুযোগ নেই: ইসলামী ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট
ব্যাংকের লকারে গ্রাহকের সঞ্চিত কোনো জিনিস ব্যাংকের দায়িত্বরতদের মাধ্যমে চুরি যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার প্রধান ও ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরী।
রোববার (০২ জুন) সকালে শফিকুল মাওলা চৌধুরী তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "ব্যাংক কর্মীদের দ্বারা গ্রাহকের লকার থেকে কিছু চুরি হওয়া অসম্ভব। কারণ গ্রাহকের কাছে থাকা চাবি ছাড়া লকার খোলার কোনো সুযোগ নেই।"
চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখার লকার থেকে এক গ্রাহকের ১৪৯ ভরি স্বর্ণ চুরি যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ব্যাংকটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।
এর আগে, গত ২৯ মে দুপুরে ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় কিছু স্বর্ণালংকার আনার জন্য যান ব্যাংকের গ্রাহক রোকেয়া আক্তার বারী। গত ১৭ বছর ধরে তিনি ব্যাংকটির লকার ব্যবহার করছেন।
এই গ্রাহক জানান, লকারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে লকার খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে লকার কক্ষের দরজা খোলা হয়। এরপর ওই কর্মকর্তা গ্রাহকের বরাদ্দকৃত লকারটি ইতোমধ্যেই খোলা দেখতে পান। গ্রাহকের অভিযোগ, লকারে ১৪৯ ভরি স্বর্ণের পরিবর্তে মাত্র ১০ থেকে ১১ ভরি স্বর্ণ অবশিষ্ট ছিল। খোয়া যাওয়া স্বর্ণালঙ্কারের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা বলে জানান তিনি। গত শনিবার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হয়।
এমন অভিযোগের বিষয়ে গতকাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম শফিকুল মাওলা চৌধুরী বলেন, "গ্রাহকরা রেজিস্ট্রি খাতায় লিপিবদ্ধসহ দালিলিক কার্যক্রম সম্পাদনের পর ব্যাংকের দায়িত্বরত লকার ইনচার্জ মাস্টার চাবি দিয়ে লকার কক্ষ খুলে গ্রাহককে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেন। এরপর গ্রাহক তার কাজ সম্পাদন করে নিজ দায়িত্বে নিজের লকার চেম্বারটি বন্ধ করে বের হয়ে যান। এরপর আমাদের কর্মকর্তা লকার কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেন। গ্রাহকের লকারের দ্বিতীয় কোনো চাবি ব্যাংকের কাছে থাকে না।"
"সেখানে তিনি কী রেখেছেন, সেটি আমাদের জানা নেই। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুসারে লকারে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও স্থাপনের সুযোগ নেই," বলেন তিনি।
এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, ব্যাংকটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চকবাজার শাখা পরির্দশন করেছেন বলে জানা গেছে।
এসএম শফিকুল মাওলা চৌধুরী আরও বলেন, "যেহেতু গ্রাহক ছাড়া লকার খোলার সুযোগ নেই। আমাদের ধারণা, গ্রাহক সর্বশেষ লকার রুম চেকআউটের সময় ভুল কিংবা অসাবধানতাবশত লকার আংশিক খোলা অবস্থায় চাবি বের করে আসতে পারেন। তবে সবকিছু নির্ভর করছে তদন্তকারী দলের প্রতিবেদনের ওপর। ব্যাংকের তিন সদস্যের কমিটি বৃহস্পতিবার সারাদিন চকবাজার শাখায় এসে প্রয়োজনীয় তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছে। তদন্ত চলমান রয়েছে।"
তিনি বলেন, "লকারে কি পরিমাণ স্বর্ণ বা কি রেখেছেন, তা প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই। তবে চুরি বা ডাকাতি ঘটনা ঘটলে চুক্তি অনুসারে, বীমার অর্থ পাবেন। ছোট লকারের বিপরীতে এক লাখ, মাঝারি লকারে দুই লাখ এবং বড় লকারের বিপরীতে তিন লাখ টাকা পাবেন গ্রাহক। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সব শাখার জন্য এই বীমা করেছে। অভিযোগকারী গ্রাহকের লকারটি মাঝারি।"
ভুক্তভোগী চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ না করে মামলা দায়েরের পরামর্শ দিয়েছে। গ্রাহক আদালতের মাধ্যমে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।