ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে দ্বিগুণ সময়, বিআরটিসিসহ সব পরিবহনে ‘ভাড়া নৈরাজ্য’
ঢাকা থেকে বরিশালে বিআরটিসি'র বাসে চড়ে এসেছেন আব্দুল ওয়াদুদ। নিয়মিতই তিনি বিআরটিসির গাড়িতে যাতায়াত করেন। কিন্তু আজকের যাত্রা তার কাছে চরম ভোগান্তির ছিল।
আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সাধারণত ৬শ টাকা ভাড়া হলেও ৫শ টাকায় যাত্রী আনা-নেওয়া করে বিআরটিসি। 'কিন্তু আজকে ১০০০ টাকা দিয়ে টিকেট নিতে হয়েছে। দালালের কাছ থেকে না, গুলিস্তান বিআরটিসির কাউন্টার থেকেই এই টাকায় টিকেট নিয়েছি।'
'মুখে যে যা বলুক, বাস্তবতা দেখতে ঈদযাত্রায় বাসের যাত্রী হয়ে দেখা উচিত তাদের। সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সকাল ৯টায় গুলিস্তান থেকে বাস ছেড়েছে। বিকেল সাড়ে তিনটায় বরিশালে পৌঁছেছি,' যুক্ত করেন ওয়াদুদ।
বিআরটিসির বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বরিশাল ডিপোর ম্যানেজার জামিল হোসেন বলেন, 'ঢাকা থেকে বরিশাল, বাউফল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, কুয়াকাটা রুটে আমাদের সার্ভিসের কোনো স্টেশনে এক হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারিত নয়।'
ঢাকা থেকে বরিশাল এক হাজার টাকা যে বাসটি ভাড়া রেখেছে, সেটি বাউফল রুটের। 'কেন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করেছে, তা খতিয়ে দেখে আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে,' বলেন তিনি।
শুধু যাত্রী আব্দুল ওয়াদুদই নয়, চরম ভোগান্তির কথা তুলে ধরলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বাসগুলোর যাত্রীরাও। বরিশালের রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় এ যাত্রীদের সঙ্গে।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সায়েদাবাদ থেকে আল আমিন পরিবহনে এসেছেন খলিলুর রহমান। যাবেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বগা। খলিলুর বলেন, 'ভোর ছয়টায় সায়েদাবাদ গিয়ে সাড়ে ৯টার গাড়িতে টিকিট পেয়েছি। আগে ৫শ টাকা হলেও আজকে ৮শ টাকা করে টিকেট নিয়েছে। পদ্মা সেতুর টোলে যানজট থাকায় আসতে দেরি হয়েছে। আমরা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এসে পৌঁছি সাড়ে ৩টায়।'
তার সঙ্গে থাকা কহিনূর বেগম বলেন, 'এর চেয়ে লঞ্চের যাত্রা ভালো ছিল। বাসে পথে পথে নৈরাজ্য। হেল্পার, কন্ডাকটরেরা যাত্রীদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই খারাপ আচরণ করে। যেখানে খুশি সেখানে থামিয়ে রাখে। ভোগান্তির অন্ত নেই বরিশালের রুটে।'
আরেক যাত্রী ইমরান বলেন, ঢাকা কুয়াকাটা রুটের শ্যামলী বাসে ভাড়া রেখেছে ৮শ টাকা। সবগুলো বাসই একসাথে ভাড়া বাড়িয়েছে।
'ঈদ এলেই সড়কে বাস শ্রমিক-মালিকরা নৈরাজ্য করে। সরকার প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয় না। শুধু মুখে মুখে আশ্বাস দেয়,' অভিযোগ করেন তিনি।
শুধু ঢাকা–বরিশাল রুটেই নয়, ঢাকা–কুয়াকাটা, ঢাকা–বাউফল, বরগুনা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর, ভান্ডারিয়া, স্বরুপকাঠিসহ যতগুলো রুট রয়েছে সবগুলো রুটেই ভাড়া বাড়িয়েছে প্রতিটি পরিবহন।
'ঢাকা থেকে সড়কপথে বাড়ি ফেরাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। প্রতিটি গাড়ি বেপরোয়াভাবে চলে। তাছাড়া আগের চেয়ে আড়াইশ টাকা বেশি নিয়েছে টিকিটের মূল্য,' বলেন পিরোজপুর রুটের ইমাদ পরিবহনের যাত্রী শফিকুল ইসলাম হৃদয়।
কুয়াকাটাগামী হানিফ পরিবহনের যাত্রী সাদিয়া আক্তার নলছিটির দপদপিয়া জিরো পয়েন্ট মোড়ে নেমেছেন। 'অথচ আমার কাছ থেকে কুয়াকাটার ভাড়া নিয়েছে। বাসে এমনভাবে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না,' বলেন এ যাত্রী।
ঈদ বা উৎসব এলেই নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রচলিত রেওয়াজ করে নিয়েছে পরিবহনগুলো বলে মনে করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
'আমরা অনিয়মের একটা দুষ্টচক্রের আটকে আছি। বাড়তি ভাড়া নিলেও কেউ স্বীকার করছে না। যারা এসব কাজ করছেন, তারা ক্ষমতাশালী হওয়ায় কার্যত কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে,' বলেন তিনি।
বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, 'ঢাকাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হলে আমাদের আসলে কিছুই করার নেই। তবে ঈদের পরে বরিশাল থেকে যাত্রী হয়রানি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও সড়কে চলাচলে বিঘ্ন যেন না ঘটে সেজন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া আছে।'
তিনি বলেন, যাত্রীরা যেন নিরাপদে কর্মস্থলে ফিরতে পারেন, সেজন্য ভ্রাম্যমান আদালতের টিমসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সবগুলো ইউনিট সমন্বিতভাবে কাজ করবে।