বন্যায় প্লাবিত সিলেটে বৃষ্টি থেমেছে, কমছে পানি
সপ্তাহখানেক টানা বৃষ্টির পর সিলেটে অবশেষে থেমেছে বৃষ্টিপাত। আজ (শুক্রবার) রোদের দেখাও মিলেছে। ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জে পানিও কমতে শুরু করেছে।
সিলেট অঞ্চলের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ সবকটি নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। একইভাবে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যেও তেমন বৃষ্টিপাতও হয়নি। ফলে উজান থেকে ঢল নামাও বন্ধ হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, "আজ (শুক্রবার) নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।"
সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে আজ দুপুরে পাওয়া তথ্যমতে, জেলার ১০ লাখ ৪৩ হাজার লোক পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৯টি ওয়ার্ডসহ জেলার ১৩৬টি পৌরসভা ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে পানি কিছুটা কমায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোক আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ২৫ হাজার ২৭৫ জন।
চলতি বছরে প্রথম দফার বন্যায় সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জের মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছিল। আর দ্বিতীয় দফায় সিলেটের সব উপজেলার মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছে।
পানি কমতে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি নামেনি। অবশ্য নগরের বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, আজ সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাট পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
অপরদিকে কুশিয়ারা নদী আমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ১ দশমিক ২ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব জানান, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেটের কোথাও বৃষ্টি হয়নি। তবে আকাশে মেঘ রয়েছে। ফলে আগামী দুদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
সিলেটের ২০টি নদী খননের পরিকল্পনা
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, "আগামীতে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যা কবলিত এলাকা কীভাবে সহনীয় পর্যায় নিয়ে আসতে পারি সে লক্ষ্যে আমরা আলোচনা করেছি। ইতোমধ্যে সুরমা নদীর ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে বাকিটুকু খনন করা হবে। এছাড়াও সামগ্রিকভাবে সুরমা-কুশিয়ারা নদী খনন করবো। সুনামগঞ্জের ছোট বড় ২০টি নদী আমরা খনন করবো।"
তিনি বলেন, "এ খনন কাজ করলে নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যে আমি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছি। উজান থেকে যে পরিমাণ পানি আসে তার ধারণ করার ক্ষমতা তৈরি করার জন্য যে সকল নদী ও খাল খনন করার দরকার সিলেটের প্রধান প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দিয়েছি।"
আজ সকালে সুরমা নদী পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, কাউন্সিলরবৃন্দ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।