পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে বাজেটে ‘প্রকৃত বরাদ্দ’ কমেছে ২.৩৫ শতাংশ: চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়লেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু খাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের কম এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের 'প্রকৃত বরাদ্দ' ২.৩৫ শতাংশ কমেছে বলে দাবি করেছে গবেষণাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
চলতি মাসের শুরুতে সংসদে ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেটের বিশ্লেষণে সংস্থাটি বলেছে, কার্বন কর এবং দূষণ কর আরোপের মাধ্যম বছরে ৩.৪ বিলিয়ন ডলার সবুজ অর্থায়ন সম্ভব।
শনিবার (২২ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ এ বাজেট বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, 'জলবায়ু সহনীয়তা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিতে বাজেটে জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ ব্যয় করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ জিডিপির মাত্র ০.৭০৬ শতাংশ।'
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় এবারের বাজেটে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বাড়লেও বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় প্রকৃত বরাদ্দ কমেছে।
জাকির হোসেন বলেন, 'প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪ হাজার ১১৪.২ মেগাওয়াট। প্রতি অর্থবছরে গড়ে কমপক্ষে প্রায় ৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে
মাত্র ১০০ কোটি টাকা বা ৩.২ শতাংশ তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, প্রতি অর্থবছরে বাংলাদেশের সার্বিক জলবায়ু অর্থায়নে ঘাটতি ২৩.৪ বিলিয়ন ডলার।
দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হারানো কর্মদিবসের আর্থিক মূল্য বিবেচনায় সার্বিক জলবায়ু অর্থায়নে ঘাটতি বছরে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার। ঘাটতির তুলনায় আন্তর্জাতিক উৎস থেকে বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ক্রমবর্ধমান পানি, মাটি দূষণসহ শ্রমিকদের দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি পোশাকের ভোক্তার ওপর পরিবেশ সংরক্ষণ ফি বা কর আরোপের সুপারিশ জানিয়েছে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির ওপর ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কার্বন কর আরোপ করে বার্ষিক ২ হাজার ৬০ কোটি থেকে ৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব বলে দাবি করে সংস্থাটি।
তাছাড়া প্লাস্টিক উৎপাদন, ইট ভাটা, ভবন নির্মাণ, পানি উত্তোলন ও বনভূমি কর্তনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর ৫ শতাংশ দূষণ করারোপ করে আরও ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব বলেও দাবি করে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ।
সংস্থাটি আরও বলেছে, শুধু ক্রান্তীয় ঝড়ের কারণে বার্ষিক গড় ক্ষতি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে বাধ্য হতে পারে।