সিলেটে কমছে বন্যার পানি, খুলছে পর্যটনকেন্দ্র
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/06/23/278672125_1380519459090368_1678550247370812042_n.jpg)
সিলেটের বিভিন্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমছে। এ অবস্থায় শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। রোববার (২৩ জুন ) গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও রাতারগুল পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য মতে, রোববার পর্যন্ত সিলেটে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৭ জন লোক। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১৯ হাজার ৭৩৮ জন। পানি কমায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুই হাজার লোক আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
তবে পানি কমলেও বন্যা আক্রান্তদের দুর্ভোগ কমেনি। বরং পানি নামার সাথেসাথে স্পষ্ট হয়ে উঠছে বন্যার ক্ষত। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কের। জেলার বেশিরভাগ সড়কই ভেঙে গেছে। ভেঙে গেছে জলমগ্ন হওয়া কাচা বাড়িঘর, ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। তবে এখনও পানি পুরোপুরি না নামায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো।
পানি নেমে যাওয়ায় গত শনিবার আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরেন জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল এলাকার দিনমজুর কবির আহমদ। তিনি বলেন, 'এতদিন তবু আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম, মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল। কিছু একটা খাবারও মিলতো। কিন্তু এখন বাড়ি ফিরে আরও বিপদে পড়েছি।'
'পানিতে পুরো ঘর ভেঙে গেছে। ঘরে কিছু জমানো ধান ছিল, সেগুলোও পানিতে ভেসে গেছে। এখন থাকব কোথায়, আর খাব কী?', যোগ করেন তিনি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, 'সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। প্লাবিত এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পানি পুরো নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।'
খুলে দেওয়া হলো জাফলং ও রাতারগুল
পর্যটক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এবং আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকা সাপেক্ষে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও রাতারগুল পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে।
রোববার উপজেলা পর্যটন কমিটি, পর্যটনকেন্দ্রগুলো চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে গত শুক্র ও শনিবার দুই দফা গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইদুল ইসলামের নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের একটি দল পর্যটনকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে।
তবে জাফলং পর্যটনকেন্দ্রে নৌ-চলাচলের রুটে যাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় সকল বোট মালিক, নৌ-চালক ও মাঝিদেরকে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
জাফলংয়ে পিয়াইন নদীর পানির গভীরতা ও স্রোত বিবেচনায় সাঁতার জানে না এবং ১২ বছরের কম বয়সীদের নিয়ে জাফলং ট্যুরিস্ট স্পটে নৌকায় চলাচল করা যাবে না। ট্যুরিস্ট পুলিশকে পর্যটনকেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিধানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো শর্তসাপেক্ষে রোববার দুপুর থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটক, ট্যুর অপারেটর ও নৌকার মাঝিসহ সকলকে অবশ্যই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।'
পর্যায়ক্রমে বন্ধ থাকা সিলেটের বাকি পর্যটনকেন্দ্রগুলোও খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।
প্রসঙ্গত, বন্যার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায়, গত ১৭ জুন সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এর আগেও ৩০ মে বন্যার জন্য সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। পরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ৭ জুন থেকে খুলে দেয়া হয়েছিল পর্যটনকেন্দ্রগুলো।