সোনাগাজীতে মতিউরের শ্বশুরবাড়িতে ডুপ্লেক্স বাড়ি ঘিরে যা জানা গেল
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকার অসংখ্য বাড়ির মধ্যে মিয়া বাড়ি বেশ সুপরিচিত। তবে এ বাড়িকে ঘিরে বর্তমানে নানা প্রশ্ন স্থানীয়দের মনে। কারণ, ইতিমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা আলোচিত মতিউর রহমানের শ্বশুরবাড়ি এটি।
বিলাসবহুল বাড়িটি মতিউর তার শাশুড়িকে বানিয়ে দিয়েছেন বলে আলোচনা চলছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, 'ছাগলকাণ্ডে' ভাইরাল হওয়া ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবুর অনুরোধে শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়িকে ১০ বছর আগে এ বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে উপহার দেন মতিউর রহমান। সে কারণে গণমাধ্যমে নানা নেতিবাচক খবর জেনে এখন স্থানীয়রা এ বাড়ি ঘিরে নানা প্রশ্ন করছেন।
গত শুক্রবার (২১ জুন) সকালে সোনগাজীর সোনাপুর এলাকায় মিয়া পরিদর্শনে যান স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়িটির দরজা বন্ধ। ঘরে কেউ নেই। সামনে দুটি কুকুর শুয়ে আছে।
মতিউরের বানিয়ে দেওয়া বিলাসবহুল বাড়িটি জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় একব্যক্তি দেখাশোনা করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মতিউর রহমানের শাশুড়ি বর্তমানে ঢাকায় মেয়েদের বাসায় ও বাড়িতে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। তিনি এর বেশি কিছু জানাতে রাজি হননি।
জসিম আরও জানান, গত ১০-১২ বছর ধরে তিনি এই বাড়ির দেখাশোনা করছেন। সর্বশেষ গত দুই মাস আগেও মতিউর রহমান স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবু, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও শাশুড়িকে নিয়ে এ বাড়িতে এসেছিলেন। দুদিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান।
এমন সময় আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হকের সঙ্গে দেখা হয়। চেয়ারম্যান আজিজুল জানান, মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবু তার চাচাতো বোন। শাম্মীর স্বামী সাবেক এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান। ইফাত তাদের সন্তান।
শাম্মীর এক ভাই ঢাকায় ব্যবসা করেন। বিভিন্ন সময়ে মতিউর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ফেনীর সোনাগাজীতে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসতেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তবে শাশুড়িকে মতিউরের বিলাসবহুল বাড়িটি উপহারের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদে মতিউরের ছেলে ইফাত ১৪টি গরু ও ছাগল কিনেছিলেন। এর মধ্যে আটটি গরু ও দুটি ছাগল ঢাকায় কোরবানি দিয়েছেন। বাকি চারটি গরু সোনাগাজীতে নানার বাড়িতে নিয়ে এসে জবাই করে আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, আত্মীয়দের নামে মতিউর রহমানের কিছু জমিজমা ফেনী ও সোনাগাজীতে রয়েছে। যা মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের চাচাত ভাই মো. আরিফুর রহমান তাদেরকে কিনে দিয়েছেন। তিনি এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন।
মো. আরিফুর রহমান বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। মুশফিকুর রহমান ইফাত তাদের একমাত্র সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই রয়েছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মী আখতারের বিয়ে হয়।
তিনি আরও বলেন, বিয়ের এক বছর পর শাম্মী আখতারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শ্যালিকা লাভলী আক্তার ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে লাভলীকে পড়ালেখা শেষে বিয়ে দেন। আর শ্যালক মো. নকিবকে বাসায় রেখে লেখাপড়া করান। সম্প্রতি নকিব চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তাঁরা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, শ্যালক নকিব ঢাকাসহ বিদেশে মতিউরের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম দেখাশোনা করেন।
আরিফুর রহমান বলেন, মতিউর হঠাৎ করে একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় তিনি নিজেকে নির্দোষ ও আড়াল করতে স্ত্রী-সন্তানদের অস্বীকার করছেন। তবে এটা অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া ফেনী ও সোনাগাজীতে মতিউর ও নকিবের পৈতৃক ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই। তিনি তাদেরকে কোনো জমিজমা কিনে দেননি বলেও জানান আরিফুর।