এক বছরে দেশে সাইবার অপরাধ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১১.৮৫%, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগ নারী
দেশে এক বছরের ব্যবধানে সাইবার অপরাধর দ্বিগুণের বেশি বেড়ে মোট অপরাধের ১১.৮৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আর এসব অপরাধের শিকার ৫৯ শতাংশই নারী।
শনিবার (২৯ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত 'বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা ২০২৪ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রকাশিত গবেষণায় জানানো হয়— অপরাধের শীর্ষে রয়েছে সোশাল মিডিয়া ও অনলাইন অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়া (হ্যাকিং) সংক্রান্ত অপরাধ, যা মোট সংঘটিত সাইবার অপরাধের ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনেআরও বলা হয়, ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অপপ্রচার সংক্রান্ত সাইবার অপরাধের শিকার বেশি হচ্ছেন নারীরা। পর্নোগ্রাফী সংক্রান্ত সাইবার অপরাধেও নারী ভুক্তভোগী বেড়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে চলতি ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সাইবার অপরাধের শিকার ১৩২ জন ভুক্তভোগীর স্ব-প্রণোদিত হয়ে জানানো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ)। সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি শিক্ষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সাইবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অপরাধ। তবে ১৮ বছরের নিচে শিশুদের সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার হার কিছুটা কমে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ নেমেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী— সাইবার অপরাধের শিকার শতকরা ৭৮.৭৮ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর। ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭.৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানী, ৪০.১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন।
এই ভুক্তোভোগীদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১.২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়েরি এবং ১৮.৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগকারীদের মধ্যে ১২.৫০ শতাংশ সুফল পেয়েছেন; বাকি ৮৭.৫০ শতাংশই অভিযোগ করে কোনো সুফল পাননি।
জানা যায়, অভিযোগকারীদের বেশিরভাগই শিক্ষিত।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪০.৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ২১.২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান পাস, ১৬.৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পাস এবং ১২.৮৭ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচের।
সভায় সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় গণ সাইবার স্বাক্ষরতার পাশাপাশি দেশের সাইবার সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সাইবার সল্যুশন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান; ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স (জি.এস.জি) বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ এ হুসেইন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ প্রমুখ।
সিক্যাফ সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নুরুল আশরাফী।