এনবিআরের কাছে এস আলমের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট দাবির ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট
এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আরোপিত সাত হাজার কোটি টাকার বেশি অপরিশোধিত ভ্যাট ও জরিমানা আদায়ের সরকারি দাবির বৈধতা নিয়ে সোমবার (১ জুলাই) প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই কোম্পানির দুটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রুল জারি করেন।
রুলের ওপর শুনানির জন্য ১৫ জুলাই দিন ধার্য করেছেন বেঞ্চ।
এর আগে ৯ জুন চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কোম্পানি দুটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে 'ফাঁকি দেওয়া' তিন হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ভ্যাট এবং এ বকেয়ার জরিমানা ও সুদবাবদ তিন হাজার ৫৩১ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে বলে।
কাস্টমস অধিদপ্তর অনুসারে, ২০১৯–২০ এবং ২০২১–২২ অর্থবছরে এসব ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ফাঁকি দেওয়া হয়েছিল।
গতকাল হাইকোর্ট তার রুলিংয়ে বিবাদীদের কাছে জানতে চান, দুটি কোম্পানির কথা না শুনে চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক জারি করা ভ্যাট নির্ধারণের আদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।
বিবাদীরা হলেন চট্টগ্রাম কমিশনারেটের কমিশনার ও জেলা প্রশাসক; এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট, কর্ণফুলী সার্কেল, তালতলা চৌকি, পটিয়া, চট্টগ্রামের রাজস্ব কর্মকর্তা। তাদের দশদিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-এর ৭৩ ও ৮৫ ধারা কঠোরভাবে অনুসরণ করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চট্টগ্রাম কমিশনারেটের কমিশনারকে কেন বলা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
শুনানির সময় এস আলমের কোম্পানি দুটির আইনজীবী আহসানুল করিম বেঞ্চকে বলেন, তার মক্কেলরা ৪ জুন কমিশনারেটের কাছে তাদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য সময় চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ভ্যাট প্রদানের আদেশ দেওয়ার আগে তার মক্কেলদের কথা শোনা হয়নি।
গত বছরের ৪ অক্টোবর ও ২৭ ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের ১৮ মার্চ জারি করা শো-কজ নোটিশের অভিযোগের বিরুদ্ধে তার মক্কেলদের আত্মপক্ষ সমর্থন করতে না দিয়ে আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম কমিশনারেটের কমিশনার বিচার প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছেন, বলেন তিনি।
সরকারের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ এমআর চৌধুরী আদালতকে বলেন, গত একবছর ধরে কোম্পানিগুলোকে কমিশনারের কাছে তাদের বক্তব্য পেশ করার জন্য বেশ কয়েকবার সময় দেওয়া হয়েছিল।
'কিন্তু তারা তা করেনি। বিদ্যমান আইনে তাদেরকে সীমাহীন সময় দেওয়া যায় না,' তিনি বলেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস হাইকোর্টকে বলেন, কোম্পানিগুলোর ভ্যাট পরিশোধ করার উদ্দেশ্য ছিল না। কোম্পানিগুলোর পক্ষে আইনজীবী আহসানুল বলেন, তার মক্কেলরা কখনো বলেনি যে, তারা ভ্যাট দেবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট শাখার একটি নীরিক্ষা অনুসারে, কোম্পানিগুলোর অপরিশোধিত ভ্যাট এবং জরিমানার অঙ্ক সাত হাজার কোটি কোটি টাকারও বেশি। এগুলো ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে স্বল্প ক্রয়-বিক্রয় তথ্য দেখিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।
পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের একজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি ওই নিরীক্ষা পর্যালোচনা করে। এ কমিটিও একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড কোনো ধরনের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছে।