‘দীর্ঘস্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা কোটা স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে’: জি এম কাদের
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্য কোটার বিরোধিতা করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের। বড় অঙ্কের মুক্তিযোদ্ধা কোটা 'স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে' বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এছাড়া সরকার প্রবর্তিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে মানুষের 'আস্থাহীনতা' আছে বলেও মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
বুধবার (৩ জুলাই) জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমার ব্যক্তিগত মত হলো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের চাকরির জন্য, বিশেষ করে বড় অঙ্কের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে — বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠন — এই মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে।'
জি এম কাদের বলেন, 'আগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে হতো। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দাবি ছিল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হোক। মেধাভিত্তিক সমাজ হচ্ছে না। মেধাকে দাম দিতে হবে।'
তিনি বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা দাম দেব। কিন্তু বংশ-পরম্পরায় নাতি-নাতনিসহ তাদের সবাইকে দিতে হবে বিষয়টি সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে দ্বিমত আছে। তারা এর সঙ্গে একমত হতে পারছে না।'
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিল করা হয়। এটা দাবি ছিল না। দাবি ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল, বাকিগুলো থাকবে। হঠাৎ করে ২০২১ সালে করা মামলার রায়ে বলা হয়েছে কোটা আগের মতো থাকবে। এর ফলে ছাত্রদের মধ্যে আবার সমস্যা সামনে আসছে।'
তিনি বলেন, 'সংবিধানে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জন্মস্থানের কারণে কেউ প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য হবেন না।
'সরকারকে অথরিটি দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য, অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে সেজন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। অনগ্রসর যারা, নৃগোষ্ঠীকে [কোটা] দিতে পারি, সংখ্যালঘুকে দিতে পারি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্ম যারা থাকবেন তারা সবাই অনগ্রসর, এটা আমি মানতে রাজি না।'
তিনি বলেন, 'সংবিধানকে যদি মানতে হয় তাহলে মানতে হবে, অনগ্রসর যারা নন, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অনগ্রসর বা এরকম পিছিয়ে পড়া অবস্থানে নেই। কাজেই তার বিষয়টি ওভাবে দেখাটা সংবিধানসম্মত নয়।'
দেশকে এগিয়ে নিতে মেধার দরকার উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, 'সামনের বিশ্ব আমাদের সেন্টিমেন্টের ওপর থাকবে না। আমাদের কমপিটিশন [প্রতিযোগিতা] করতে হবে। সেখানে মেধাকে প্রাধান্য না দিলে তাহলে প্রতিযোগিতা করব কিসের বেসিসে [ভিত্তিতে]।'
সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে জি এম কাদের বলেন, 'আগে যেটা সর্বজনীন পেনশন স্কিম দেওয়া হয়েছিল, যেকোনো কারণেই হোক সেটায় খুব একটা সাড়া আসেনি। এখন নতুন একটা স্কিম চালু করা হয়েছে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বেশিরভাগ সরকারের সমর্থক ও সরকারের কাছের লোক মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় এ নেতা বলেন, 'তারা [শিক্ষকেরা] মানতে চাইছেন না। অনেকে মনে করছেন সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে কম। অনেকে এটাও মনে করছেন না। তারপরও মানছেন না।'
তিনি বলেন, 'বললে খারাপ শোনাবে… মানুষের আস্থাহীনতা আছে যে সরকার যেটা কমিট করছে আল্টিমেটলি সেটি দিতে পারবে কি না, দেবে কি না, মানুষ পাবে কি না। এটা বড় ধরনের একটা আস্থাহীনতা। এটা আমাদের, সরকারের কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।'