কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট: কোটা বহাল রেখে আওয়ামী লীগ আমলে বাছাইকৃত ১৪৩ জনকে নিয়োগ
বিভিন্ন মহল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ২৮টি শূন্য পদের বিপরীতে ১৪৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এসব নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং অন্যান্য কোটা বহাল রাখা হয়েছে।
২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচিতদের নাম বারির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকার পরিবর্তনের পর বারির বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য লিখিত আবেদন পান। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান ডিজি ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ একাধিক আপত্তি উপেক্ষা করে আগের আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত প্রাক্তন ডিজির সুপারিশে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করেছেন।
২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট তৎকালীন ডিজি মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও অন্যান্য কোটা বহাল রেখে ২৮টি শূন্য পদের বিপরীতে ১৪৩টি পদ পূরণের জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা ছাড়া ভিন্ন মতাদর্শের কেউ এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারেননি।
সরকার পরিবর্তনের আগে তৎকালীন ডিজি দেবাশীষ সরকার এবং পরিচালক (গবেষণা) ড. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ (বর্তমান ডিজি) যৌথভাবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা আর্থিক লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কম যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন এবং প্রকৃত মেধাবীদের বঞ্চিত করেছেন।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বারির বিজ্ঞানীরা তৎকালীন ডিজি দেবাশীষ সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার অপসারণ দাবি করেন। এরপর তিনি অফিসে আর ফিরতে পারেননি এবং নিয়োগ চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হন।
এরপর ২২ অক্টোবর 'দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক সমাজ' ব্যানারে মো. রোকনুজ্জামান সরকার ও নাজমুল খন্দকার সুমন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য আবেদন করেন। তাদের অভিযোগ, কোটা ব্যবস্থার আড়ালে দলীয় বিবেচনা ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে।
নিয়োগ বাতিলের দাবিতে বারির অভ্যন্তরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, বর্তমান ডিজি ড. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ নিজেকে বিএনপি সমর্থক হিসেবে উল্লেখ করে পদে স্থায়িত্ব নিশ্চিতের জন্য উচ্চপর্যায়ে তদবির করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর তিনি ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগ চূড়ান্ত করেন এবং তালিকা প্রকাশ করেন।
তালিকা প্রকাশের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লিখিত আবেদন জমা দেয় এবং নিয়োগ বাতিলের দাবি জানায়। তারা হুঁশিয়ারি দেয়, দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে।
ডিজি ড. আব্দুল্লাহ ইউছুফ আখন্দ দাবি করেন, সকল কোটা বজায় রেখে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশের যাচাই শেষে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয় এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।