“ভোগান্তি হচ্ছে হোক, তারপরও কোটা বাতিল হোক”
চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
'সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধনের' এক দফা দাবিতে আজ সোমবার (৮জুলাই) বিকেল তিনটায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে সড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এতে মহাসড়কের উভয়পাশে তীব্র জানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
বাস, সিএনজি ও প্রাইভেটকারসহ ব্যক্তিগত অন্যান্য যানবাহনে আটকা পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। তবে দুর্ভোগ সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করছেন মহাসড়কে আটকে পড়া যাত্রীদের অনেকে।
খুলনার পাইকগাছা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে আসছিলেন মো. আক্তারুজ্জামান। বিকেল ৩টা থেকে জাবি ক্যাম্পাস সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আটকে আছেন তিনি। নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও তিনি কোটা পদ্ধতির বাতিল চান।
আক্তারুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমি ও আমার ভাই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমরা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম বৈষম্য দূর করার জন্য, কোনো সুবিধা পাবার আশায় না। অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কোটার জোরে একটা পরিবার থেকে পাঁচজন মানুষ চাকরি পাবে, আর সারাবছর পড়াশোনা করেও মেধাবীরা বেকার থাকবে– এটাতো মেনে নেয়া যায় না।"
এই মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আপনি পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেন, কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু তাদের নাতি-নাতনীদের মধ্যে যদি কেউ সরকারি চাকরিতে অযোগ্য হয়– তাকে কেন চাকরি দিবেন? এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা বন্দুক হাতে নিয়েছিলাম– চলমান কোটা ব্যবস্থা তার বিপরীত। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। ভোগান্তি হলে হোক তারপরও কোটা (পুনর্বহাল) বাতিল হোক।"
পাবনা থেকে ঢাকাগামী আরেক যাত্রী আব্দুল হামিদ বলেন, "আমি দুইঘন্টার বেশি সময় ধরে এখানে আটকে আছি, কিন্তু একজনকেও পাইনি যে কোটার পক্ষে। একজনকেও খুঁজে পাবেন না যে এই কোটার পক্ষে। দেশে আজ চাকরির সংকট। তার ওপর এই কোটাব্যবস্থা প্রকৃত মেধাবীদের জন্য বিরাট বাঁধা।"
অবরোধের সময় ঢাকা থেকে ধামরাইগামী মহাসড়ক ব্যবহারকারী ঢাকা জজ কোর্টের শিক্ষানবিশ আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন টিবিএসকে বলেন, "আমি বিকেল ৩টা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেইটের সামনে বাসে বসে আছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জন্য বাস যাচ্ছে না। বাসে অনেক শিশুরা কান্না করছে, অনেকে অসুবিধায় আছি। তবে আমাদের কষ্ট হলেও অযৌক্তিক কোটাব্যবস্থায় বড় সংস্কার প্রয়োজন।"
যানজটে যাত্রী ও পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থকলেও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবাগুলোর জন্য হাইওয়ে পুলিশের সাথে সমন্বয় করে শিক্ষার্থীরা একটা ইমার্জেন্সি লেনে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন।