২০২৪ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি আয় বেড়েছে
ইতিবাচক ধারায় ফিরছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের পণ্য রপ্তানি বাণিজ্য। সদ্য বিদায়ী ২০২৪ অর্থবছরে ৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা রপ্তানি আয় বেড়েছে বন্দরে।
আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য। এর বিপরীতে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৭ কোটি ৫ হাজার ২০৩ টাকার পাথর, পেঁয়াজ, আদা ও জিরা।
এ থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পেয়েছে ৪ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৬ টাকা।
এর আগে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল প্রায় ৬৬ কোটি টাকার পণ্য। এ থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব পায় মাত্র ৫৬ লাখ টাকার মতো।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়। এরপর ধীরে ধীরে বাণিজ্য বাড়তে থাকায় ২০১০ সালে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আখাউড়া স্থলবন্দর।
শুরু থেকেই রপ্তানিমুখী এই স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল, তুলা, ফার্নিচার ও খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। সেখান থেকে রপ্তানি পণ্য সরবরাহ হয় ত্রিপুরার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে।
বর্তমানে রপ্তানি হওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে হিমায়িত মাছ ও সিমেন্ট। প্রতিদিন অন্তত ৪০-৫০ টন পাঙ্গাস, পাবদা ও কাতলসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং প্রায় ৭০ টন সিমেন্ট রপ্তানি হয় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। প্রতিটন মাছের রপ্তানি মূল্য ২,৫০০ মার্কিন ডলার। আর প্রতিটন সিমেন্ট রপ্তানি হয় ৮৬ ডলার মূল্যে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয় ত্রিপুরায়।
তবে বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি ও রাজস্ব বাড়লেও নানান সংকটে আমদানি কমেছে। চাহিদা মতো সব পণ্য আমদানির অনুমতি না থাকা এবং ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় আমদানি কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আখাউড়া স্থলবন্দরের কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাসিবুল হাসান বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট চলছে। যার ফলে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির জন্য চাহিদামতো এলসি খুলতে পারেননি। এছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আনার অনুমতি রয়েছে– তার অধিকাংশেরই আমাদের অঞ্চলে চাহিদা নেই। ফলে এগুলো আমদানি করে মুনাফা করা যায়না।"
তিনি আরও বলেন, "ভারতীয় প্রসাধনী এবং কাপড়ের ভালো বাজার আছে আমাদের এখানে। কিন্তু আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে এই দুটি পণ্য আনার অনুমতি দিচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এছাড়া, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা রপ্তানি বাণিজ্যে বেশি জোর দিচ্ছি। ভারতে নতুন নতুন বাংলাদেশি পণ্যের বাজার তৈরির জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার মো. ইমরান হোসেন বলেন, "ডলার আয়ের লক্ষ্যে বর্তমানে আমদানির চেয়ে রপ্তানি বাণিজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে রপ্তানি পণ্য বোঝাই গাড়িগুলো আমরা দ্রুত ছাড়করণসহ ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে থাকে শুল্ক স্টেশন কর্তৃপক্ষ।"
"আমদানি নীতিমালা অনুযায়ী অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকে, যেগুলো ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে করে আনতে কিছুটা সময় লাগে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা আখাউড়ায় না থাকলে আমদানিকারকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে সব পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়াটা বাস্তবসম্মত হবে না," বলেন সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন।