চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, ছাত্রলীগের হামলা
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও (চবি) বিক্ষোভ করছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করা বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা৷
গতকাল (রবিবার) রাত ১১ টার দিকে বিভিন্ন হল ও কটেজ থেকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে দিতে জিরো পয়েন্টে প্রধান ফটকের সামনে উপস্থিত হয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা 'তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার', 'এই বাংলার মাটি-রাজাকারের ঘাটি', 'চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রূজাকার' ইত্যাদি স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।
রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ এসময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করে ছাত্রলীগের কর্মীরা৷ এসময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা অধিকার চেয়ে আন্দোলন করতে নেমেছি, কিন্তু আমাদের রাজাকার বলা হলো। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী কখনো সেই দেশের ছাত্র জনতাকে 'রাজাকারের বাচ্চা' বলতে পারেন না। এমন বক্তব্য আমরা মেনে নিতে পারি না৷
ছাত্রলীগের হামলায় আহত এক শিক্ষার্থী বলেন, "আমরা প্রতিবাদ করতে এসেছি। কিন্তু হঠাৎ দেখি ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। ককটেল বিস্ফোরণ করলে শিক্ষার্থীরা এদিক অধিক পালিয়ে যায়।"
কোটা আন্দোলনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়ক রাসেল জানান, "আমরা মিছিল করছিলাম, তখন আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। কে মেরেছে তা জানি না। আমাদের ৪ জন শিক্ষার্থী আহত হয়। একজন মেয়েও আছেন। এছাড়া আমাদের উপর ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়"।
চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ প্রতিম বড়ুয়া বলেন, "মারামারির পরে আমি এসছি। তবে তারা নেত্রীর নামে বাজে স্লোগান দিয়েছি শুনলাম। এতোদিন কিন্তু তাদের আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়নি, আমরাও চেয়েছি কোটার যৌক্তিক সমাধান আসুক। কিন্তু স্বাধীন দেশে 'আমি রাজাকার' স্লোগান দেওয়া কখনো কাম্য নয়।"
চবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. অহিদুল আলম টিবিএসকে বলেন, "রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা হঠাৎ বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এতে ৫-৭ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। আন্দোলনকারীরা আমাদের আগে থেকে জানালে হয়তো এই ঘটনা এড়ানো যেত।"
২০২০-২১ সেশনের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সজিব মাহমুদ বলেন, "আমরা জিরো পয়েন্ট থেকে স্বাভাবিক স্লোগান দিয়ে দিয়ে শহীদ মিনার যাচ্ছিলাম সাড়ে ১১টার দিকে। আমরা স্লোগান দিচ্ছিলাম 'তুৃমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার'। এছাড়া সাধারণ স্লোগানগুলো দিচ্ছিলাম কোটা নিয়ে। কাটাপাহাড় রাস্তায় ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা কয়েকটা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ভয়ে আমাদের অনেকে দৌড়ে যায়। এরই মধ্যে ছাত্রলীগ দুদিক থেকে রাস্তায় বাইক নিয়ে আমাদের ৭-৮ জনকে আটকে দেয়। লাঠি এবং বাঁশ নিয়ে মারধর শুরু করে।"
সজিব মাহমুদ আরও অভিযোগ করেন, "সুমন নামের ২২-২৩ সেশনের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের কর্মীরা অনেক মেরছে। সুমনকে পরে শাহ আমানত হলের গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে। সে নেত্রকোনার ছেলে। পরে নেত্রকোনার অনেকগুলো ছেলে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়।"