হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর ‘মায়াকান্না’ জনগণের সঙ্গে প্রতারণার আরেকটি নজির: মির্জা ফখরুল
কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মায়াকান্না' দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনাও করেন তিনি।
শনিবার (২৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারীকে একটি হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সেখানে তাদের মধ্যে দুজন চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এ ধরনের অমানবিক ও বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড চলমান সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।
সাম্প্রতিক দেশব্যাপী সহিংসতায় আহতদের দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুটি হাসপাতাল পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গুলিবিদ্ধ ও পঙ্গু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে দেখতে যাওয়া, মায়াকান্না দেখানো এবং সহায়তার কথা বলা জনগণের সঙ্গে প্রতারণার আরেকটি নজির। তাই দেশ ও দেশের জনগণকে এর অভিশাপ থেকে মুক্ত করার জন্য সব হত্যাকাণ্ডের দায় নিয়ে সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানাচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'সরকার জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে এবং জনরোষ এড়াতে রেলসহ সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে এবং দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছে।'
এ অবস্থায় মানুষ 'কাজ না পেয়ে অনাহারে' রয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, 'দ্রব্যমূল্য দিন দিন ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। জাতি এ অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রাণ চায় এবং এর রাজনৈতিক সমাধান জরুরি।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে রিমান্ডে নিয়ে আদালতে আনার যে চিত্র গণমাধ্যমে এসেছে, তা যেকোনো বিবেকবান মানুষকে নাড়া দেবে। রিমান্ডে তাকে এমন নির্যাতন করা হয়েছে যে, তিনি দাঁড়াতে পারছেন না।'
তিনি আরও বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে শুক্রবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল থেকে ডিবি পুলিশের সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। সেখানে তারা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি সাঈদ খানকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে রাতভর নির্যাতন চালানো হয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকার মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। গ্রেপ্তারদের অবরুদ্ধ করে রাখতে নানা গল্প তৈরি করা হচ্ছে।'
বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তরুণ ছাত্রদেরও নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, 'আইডি কার্ড দেখানোর পরও তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখলেই বোঝা যায়।'
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব তার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে 'ভুল তথ্য' প্রচারের জন্য সরকারের সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, 'তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকার প্রধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যসহ আওয়ামী লীগের নেতারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক গল্প ছড়াচ্ছেন। কিন্তু দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে না।'