আয় বাড়াতে সরকারি অফিসে খাবার বিক্রি করতে চায় লোকসানে থাকা পর্যটন কর্পোরেশন
পর্যটন কর্পোরেশনের আয় বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং এদের আওতাধীন দপ্তর, অধিদপ্তর ও সংস্থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, মোটেল ও রেস্তোরাঁ থেকে খাবার নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।
গত ২৬ মে পর্যটন কর্পোরেশনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি দপ্তর আয়োজিত বিভিন্ন সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সিম্পোজিয়ামেসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনের সময় বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, মোটেল এবং রেস্তোরাঁ থেকে খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা জারি করে।
এর আগে, গত ২৩ এপ্রিল কর্পোরেশন তার আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এ ধরনের নির্দেশনা জারি করার জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক টিবিএসকে বলেন, "পর্যটন কর্পোরেশনের খাবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন, একনেক সভা, মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সভায় দীর্ঘদিন ধরে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের অন্যান্য দপ্তরেও খাবার সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কেবিনেট ডিভিশন (মন্ত্রিপরিষদ) এনড্রোস করে এই চিঠি দিয়েছে।"
তিনি বলেন, "কেবিনেট ডিভিশন পরিপত্র জারির পরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে অনুষ্ঠানে ক্যাটারিং সার্ভিস নেওয়ার অর্ডার এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ অনুষ্ঠানে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আয়োজিত এপিএ অনুষ্ঠানে, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালাতে ক্যাটারিং সার্ভিস নিয়েছে। আরও একাধিক সংস্থা যোগাযোগ করেছে।"
পর্যটন কর্পোরেশনের তথ্য ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে সংস্থাটির ৫১টি হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও বার রয়েছে। এরমধ্যে কর্পোরেশন পরিচালনা করে ৩৫টি ইউনিট, ইজারা দেওয়া হয়েছে ১৬টি।
পর্যটনের লোকসান
কর্পোরেশনের জুন মাসের সমন্বয় সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, সংস্থাটির বাণিজ্যিক ইউনিটগুলোর মে মাসে ১২.৬৮ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ওই মাসে আয় হয়েছে, ১১.৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মে মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮১ লাখ টাকা কম আয় হয়েছে।
অন্যদিকে, মে মাসে সংস্থাটির বাণিজ্যিক ইউনিটগুলোর ক্ষেত্রে মোট ব্যয় হয়েছে ১৫.১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ওই মাসে নিট লোকসান হয়েছে ৩.২৪ কোটি টাকা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্থাটির বাণিজ্যিক ইউনিটগুলোর মোট আয়ের লক্ষ্য ১৬১ কোটি টাকা।
এর বাইরে রয়েছে লিজ (ইজারা) দেওয়া ইউনিটগুলোর আয় ও ব্যয়। সেখানেও নিট লোকসান হয় বলে বিভিন্ন সময়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ওই কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ঢাকার মহাখালীতে চালু করা ডিপ্লোমেটিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজ বা মদের দোকানটি বন্ধ করে দিতে। কারণ এই দোকান থেকে কোনো বেচাকেনা হচ্ছে না। মদের দোকান বন্দ করে তার অর্ধেক জায়গায় এখন পেস্ট্রি শপ চালুর কথা ভাবছে কর্পোরেশন।
দেশে পর্যটন বাড়লেও কর্পোরেশনের বিভিন্ন সংস্থার কেন লোকসান হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেন, "পর্যটন কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ অবকাঠামো বেশ পুরানো। কর্মীদের পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এসব অবকাঠামোর সংস্কার এবং দক্ষতা উন্নয়ন দরকার। কর্পোরেশনের সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করা হচ্ছে। কুয়াকাটাতে মোটেলে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ রুম বাড়ানো হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও চেষ্টা চলছে।"
তিনি বলেন, "পর্যটন কর্পোরেশনকে নিজস্ব আয় ব্যয়ে চলতে হয়। ব্যয়ের মধ্যে একটা বড় ব্যয় রয়েছে সংস্থার কর্মীদের বেতন ভাতা, পেনশন, গ্র্যাচুইটি। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও এই বেতন-ভাতা, পেনশন, গ্র্যাচুইটির খরচগুলো ঠিকই চালিয়ে নিতে হয়েছে।"
"কর্পোরেশনের চেষ্টা রয়েছে বেসরকারি খাতের সাথে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে অবকাঠামো ও পরিচালনগত সংস্কারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার," যোগ করেন তিনি।
এদিকে, কর্পোরেশনের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এডিপির আওতায় সমাপ্ত প্রকল্পগুলোয় যে পরিমাণ আয় হচ্ছে, প্রকল্পের ব্যয় মোতাবেক অবচয় ধরা হলে বেশিরভাগ প্রকল্প লোকসানেই পরিচালিত হচ্ছে। এভাবে লোকসানি প্রকল্পের সংখ্যা বাড়লে কর্পোরেশন একটি মাথাভারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর্পোরেশনের লোকসান হয়েছে ২২.৩৭ কোটি টাকা— যা তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২০ কোটি টাকা।