খুলনায় মার্চ ফর জাস্টিস: সরকার উচ্ছেদ মামলায় ৯ শিক্ষার্থীসহ ১১ জন কারাগারে
মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে খুলনায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে থেকে ১১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি শিক্ষার্থীদের মুসলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকালে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নিদের্শ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানার দুটি মামলায় তাদের আদালতে হাজির করা হয়। সদর থানার মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তারা হলেন- মো. বেলাল হোসেন মুন্না (২১), মহারম গাজী (২১), শেখ আকাশ রহমান (১৯), নিয়াজ মুর্শিদ দোলন (২৮), মাসুম বেল্লাল সোহাগ (৩৯) ও মো. আল আমিন হক পাপ্পু (৩৪)। এদের মধ্যে নিয়াজ মুর্শিদ দোলন ও মো. আল আমিন হক পাপ্পু ছাড়া বাকি সবাই শিক্ষার্থী।
অপরদিকে, সোনাডাঙ্গা থানার মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তারা হলেন- মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২১), আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের (২১), মো. আদনান (১৯), রায়সুল হোসেন রিফাত (২২) ও শহিদুল আল জিহাদ (১৫)। তারা সবাই শিক্ষার্থী।
আদালতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রায় অর্ধশত আইনজীবী। তাদের নেতৃত্ব দেন খুলনা জর্জ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বেগম আক্তার জাহান রুকু।
তিনি বলেন, 'এই রাস্তা ছাত্রদের থেকে ধরে এনে সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের জামিনের জন্য আবেদন করেছিলাম। তবে বিচারক তাদের কাস্টডিতে পাঠিয়ে রোববারে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন।'
গতকাল বুধবার রাত ১২ টা ৫ মিনিটে এসআই মো হাসানুর রহমান বাদি হয়ে সদর থানায় মামলাটি দায়ের দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর ২ টা ৪৫ মিনিটে সদর থানার এলাকায় বিএনপি জামায়েতের নেতা-কর্মীরা কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে কেপিআইসমূহ ধ্বংস করার জন্য লোহার রড, বাশের লাঠি ও ইটের টুকরা নিয়ে অবস্থান করে। এই সময়ে তারা আশেপাশের দোকানপাঠ ভাঙচুর চালায়। তাদের প্রতিহত করতে গিয়ে এসআই মো. রাকিবুল ইসলাম ও এসআই হাসানুজ্জামান আহত হয়। সেই সময়ে পুলিশ ২৮ রাউন্ড টিয়ারসেল, ১২ রাউন্ড রবার বুলেট ফায়ার করে। সেই সময়ে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। এসময়ে তাদের কাছ থেকে ১২ টি কাঠের আছাড়ি, ৮ টি লোহার রড ও ১০ টি ভাঙা ইটের টুকরা উদ্ধার করা হয়।
এই মামলায় অজ্ঞাত আরও ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন খান বলেন, পুলিশের ওপর হামলা, কর্তব্য কাজে বাধা, জনগণের জানমালের ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে। যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিলেন।
অপরদিকে সোনাডাঙ্গা থানার ৬ জনকে ১৭ জুলাই দায়ের হওয়া একটি নাশকতা মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রসিকিউশনে বলা হয়েছে, তারা সরকার উচ্ছেদ ও খুলনার বেতার কার্যালয়ে হামলা চালানোর জন্য বুধবার দুপুরে খুলনার ময়লাপোতা পোতা মোড়ে সমাবেত হয়েছিল।
খুলনার সদর ও সোনাডাঙ্গা থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি থেকে বুধবার ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়েছিল। তার মধ্যে থেকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কেএমপি কমিশনার বলেন, 'যতদিন শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছেন ততদিন তাদের কিছু বলা হয়নি। কিন্তু বুধবার তারা লাঠিসোটা নিয়ে গাড়ি ভাঙচুর ও রাস্তা অবরোধ করে মানুষের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া হয়েছিল।'
তিনি বলেন, 'বেশ কিছু শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়েছিল, তবে তাদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করে অধিকাংশকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি কয়েকজনকে মামলা দেওয়া হয়েছে।'