সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নামে ভুল তথ্য ছড়ানো: বাস্তব চিত্র বনাম বিভ্রান্তিকর তথ্য
আপনি যদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (আগে টুইটার নামে পরিচিত) যান এবং সার্চ ট্যাবে হ্যাশট্যাগ-বাংলাদেশ (#Bangladesh) টাইপ করেন, তাহলে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার বিষয়ে অনেক ভুল কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য উঠে আসবে। এই দাবিগুলো বাংলাদেশে হিন্দু 'নিধন', 'গণহত্যা' এবং হিন্দু নারীদের 'গণধর্ষণ' করার মতোই গুরুতর।
শুধু এক্স-ই নয়, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এবং ভারতের ডানপন্থি মিডিয়া 'সচেতনতা' বাড়াতে এবং "বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার" নিন্দা জানানোর মিশনে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে; তারা হিন্দুদের বাঁচাতে বিশ্বকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷
৫ আগস্ট শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই এই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, যেটি হিন্দু মন্দির ও সম্প্রদায়ের ওপর হামলা সহ সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে।
গত ৫ থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, বরিশাল, বগুড়া ও সাতক্ষীরা জেলা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। টিবিএস-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, এই হামলাগুলোর বেশিরভাগই ৫ আগস্ট ঘটেছে।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ' এবং 'বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ' নামে দুটো সংগঠন শনিবার দাবি করেছে যে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে দেশের ৫২টি জেলায় সংখ্যালঘু মানুষের ওপর ২০৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, "তবে এই সব ক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি, ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হামলা চালানো হয়েছে নাকি সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই হামলা চালানো হয়েছে।"
তাহলে কেন ভারত থেকে এবং বাংলাদেশের ভেতর থেকেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া আসছে? এবং কোন সম্ভাব্য অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই কি তথ্য বিকৃত করা হচ্ছে?
বাস্তব চিত্র বনাম ভুল/বিভ্রান্তিকর তথ্য
ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে কৌশলে বাংলাদেশের বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও ব্যবহার করে তাদের অতিরঞ্জিত ও বিভ্রান্তকর দাবিগুলোকে প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, সেই কৌশল অনেকটাই কৌতূহলের জন্ম দেয়।
দুটো সাম্প্রতিক উদাহরণ তুলে ধরা হলো: বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ থেকে ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের হিন্দুরা সেনাবাহিনীর আক্রমণের শিকার। হ্যাঁ, গোপালগঞ্জে আগুন লাগানো হয়েছে এবং সেনাবাহিনী তাতে সাড়া দিয়েছে। কিন্তু এর সাথে হিন্দুদের কিংবা তাদেরকে আক্রমণ করার কোনো সম্পর্ক নেই।
আরেকটি উদাহরণ হিসেবে শাহবাগে ১০ আগস্টে হওয়া বিক্ষোভের কথা বলা যায় যেখানে কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়েছে, শাহবাগের বিক্ষোভে ১ লাখের বেশি লোক সমাগম হয়েছে। এটি সত্য নয় কারণ আনুমানিক ১ হাজার লোক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন, যেটিকে অনেকেই হিন্দুদের ওপর ঘটে যাওয়া আক্রমণকে তুলে ধরার একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছেন এবং তারা ঠিকই বলেছেন।
আরেকটি উদাহরণ হলো: ইসকন (একটি ধর্মীয় সংস্থা) এর সহ-সভাপতি এবং মুখপাত্র রাধারমণ দাস যার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর যাচাইকৃত অ্যাকাউন্টে ৫৭ হাজারের বেশি অনুসরণকারী রয়েছে তিনি ১০ আগস্ট লিখেছেন, "৭০০,০০০ (৭ লাখ) হিন্দুদের একটি সমুদ্র (শুধু হিন্দু: ইসকন বা শৈব নয়, শাক্তও নয়, শুধু হিন্দুরা) আজ বাংলাদেশের #চট্টগ্রামের রাস্তায় নেমেছে, #বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা ও সমান অধিকারের দাবিতে।"
যাইহোক, এখনও ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে ব্যাপক বিক্ষোভের রেকর্ড রয়েছে যখন ১ লাখের বেশি জনতা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছিল।
আল জাজিরা ৯ আগস্ট একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে কিছু গুজব এবং ভুল তথ্যকে তুলে ধরা হয়েছে। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় ভিডিও থেকে উঠে এসেছে।
এতে দেখানো হয়েছে, কীভাবে ডানপন্থি ভারতীয় অ্যাকাউন্টগুলো একটি দুর্দশাগ্রস্ত মেয়ের হাত বাঁধা ও টেপ দিয়ে মুখ আটকে রাখা অবস্থায় বসে থাকা ফুটেজ প্রচার করে সেটিকে হিন্দু মহিলাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর অভিযোগ এনেছে। কিছু অ্যাকাউন্ট গণধর্ষণের দাবিও করেছে। তবে ভিডিও ফুটেজে থাকা মেয়েটি বাংলাদেশের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী যিনি এই বছরের মার্চে ছাত্র আত্মহত্যার বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করেছেন।
ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, ভারতীয় নিউজ চ্যানেলগুলো সহিংসতার ফুটেজ সহ "ইসলামি শক্তি" হিন্দুদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনেছে। এদিকে বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, বাংলাদেশের আন্দোলন পাকিস্তানি ও চীনা গোয়েন্দাদের দ্বারা প্রভাবিত এবং এটি বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা।
ভিডিওতে ভারতীয় গণমাধ্যম এজেন্সিগুলোর বিভিন্ন ফুটেজ যুক্ত করা হয়েছে যেগুলোতে ভারতীয় সরকারকে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক মাত্রায় হিন্দুদের ভারতে প্রবেশের ব্যাপারে প্রস্তুত হতে বলা হয়েছে।
এর মধ্যে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা বাড়িগুলো আওয়ামী লীগের মুসলিম ও হিন্দু সদস্যদের। যাইহোক, ভারতীয় মিডিয়া সংবাদটিকে "সাম্প্রদায়িক রং" দিয়ে দাবি করেছে, হিন্দুদের একচেটিয়াভাবে টার্গেট করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ভারত সরকার অন্যান্য উদ্যোগের মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু এবং এখানে বসবাসরত ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) কর্তৃক অনুমোদিত একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং উদ্যোগ 'ফ্যাক্ট ওয়াচ'-এর প্রধান অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, "প্রকৃতপক্ষে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঐ ব্যক্তিরা (তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন) আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল।"
১১ আগস্ট বিবিসি বাংলা ফ্যাক্ট-চেকাররা তাদের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশে হিন্দুদের "ব্যাপক নিপীড়ন" দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বেশিরভাগ জাল পোস্ট বিভিন্ন ভারতীয় অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ভেতর থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে।
টিবিএসের প্রতিবেদনে (আগেই উল্লেখ করা হয়েছিল) আরও বলা হয়েছে, ৯ আগস্ট মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার স্থানীয়রা একটি মন্দিরের সামনে বোমা নিক্ষেপকারী দুই ব্যক্তিকে আটক করেন যারা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে এই কাজটি করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে।
আটককৃতদের একজন দাবি করেছেন, মালখানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ খানের নির্দেশে তারা হামলা চালিয়েছে। মাসুদ খান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
উপরন্তু একটি কৌতূহলপূর্ণ প্যাটার্ন লক্ষ্য করা যায় যেখানে প্রায় সবসময় তারা (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) বলে, "হিন্দু" আক্রমণের শিকার বা কিছু ক্ষেত্রে, "বাংলাদেশের হিন্দুরা" গুরুতর বিপদের সম্মুখীন— যেন এই বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রহীন।
একই সাথে এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আওয়ামী লীগের পতন ঘটার পর ভারতের সমস্ত মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রবল পক্ষপাতিত্বের আশ্রয় নিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় ভারতীয় ইউটিউবার আকাশ ব্যানার্জি (TheDeshBhakt) বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে ভারতীয় নিউজ আউটলেট, ইউটিউবার, এক্স অ্যাকাউন্ট এবং বিজেপির আইটি সেল থেকে ছড়িয়ে পড়া কিছু ভুয়া খবরকে তুলে ধরার একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়েছেন। কিন্তু ডানপন্থি ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে তীব্র মাত্রায় ছড়িয়ে পড়া ভুল/বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং মিথ্যার বিস্তার রোধে এগিয়ে আসা আকাশ এবং তার মতো ব্যক্তিরা স্পষ্টতই সংখ্যালঘু।
ট্রিফেক্টা: আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশি হিন্দু এবং ভারত
এখন ধরে নেওয়া যাক, ভারতীয় গণমাধ্যম সত্যি কথাই বলছে। তাহলে ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করেই কেন সমগ্র বাংলাদেশ হিন্দু সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে তা জিজ্ঞাসা করা অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দীর্ঘ শাসনামলে হিন্দুরা কি পুরোপুরি সুরক্ষিত ছিল? সমস্ত রাষ্ট্র-অনুমোদিত অপহরণ, অত্যাচার এবং আওয়ামী লীগ শাসনের সমালোচনা করার সাহস দেখিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা কী একচেটিয়াভাবে মুসলমানই ছিলেন?
এই বছরের ১৬ জুলাই থেকে অথবা গত ১৬ বছরে ছাত্রলীগ কি হিন্দুদের হামলা ও সন্ত্রাস থেকে রেহাই দিয়েছে?
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ২৪ বছর বয়সী বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ। হত্যাকারীরা তার ধর্মীয় পরিচয় জানত না?
ভারতীয় গণমাধ্যমের এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার উত্থান দেখে মনে হয়, বাংলাদেশি হিন্দুদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা সম্পূর্ণরূপে শেখ হাসিনার শাসনের ওপর নির্ভরশীল এবং তার পতন এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।
এই মুহূর্তে আমাদের ভারতীয় গণমাধ্যমের ফাঁপা সাংবাদিকতা চর্চার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাদেরকে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে হবে, বাংলাদেশের হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মতোই দেশের নাগরিক।
এই মুহূর্তে এটি জিজ্ঞাসা করা অপরিহার্য, জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সরকার থেকে ছাত্রদের হত্যা করা হলে ভারতের ক্ষোভ কোথায় ছিল? তখন কি "বাংলাদেশ" ভারতীয় গণমাধ্যমের কাছ থেকে এমন কাভারেজ পেয়েছিল?
ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট যেমন রিপাবলিক টিভি, জি নিউজ, নিউজ ১৮ ইন্ডিয়া, এনডিটিভি এবং আরও অনেকগুলো সংবাদমাধ্যম হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের (বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সহ) হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞকে পাশ কাটিয়ে গেছে। শত শত ছাত্র হত্যা এবং ৯ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার (অনেকে বলে, নির্বিচারে গ্রেপ্তার) বাংলাদেশের ছাত্র বিদ্রোহের সময় ভারতের গণমাধ্যম উপেক্ষা করেছিল।
অনেক ক্ষেত্রেই, ভারতীয় সাংবাদিকরা আন্দোলনকারীদের উগ্র ইসলামপন্থি এবং সন্ত্রাসী বলে ভুল প্রচারণা চালিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সহিংসতার সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোন সম্পর্ক ছিল না; আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিভ্রান্তি ছড়ানো ভারতের গণমাধ্যম এই বিষয়টিকে উপেক্ষা করেছে।
দ্বিতীয়ত, ভারতে এই সমস্ত সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এটি স্পষ্টভাবে এড়িয়ে গেছে। হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার পর মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) স্থানীয়রা এবং মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বয়সী শিক্ষার্থীরা রাতে জেগে হিন্দু মন্দির এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য রাত জেগে পাহারা দেয়।
এসবের মধ্যে ভারতীয় গণমাধ্যমে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যাপক প্রচারণা আরেকটি সমস্যা তৈরি করেছে। কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যে আখ্যান এবং ভুল তথ্য প্রচার করছে তা জয়ের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করেই করা হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত সরকারের বিবৃতি থেকে আসল বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবং দুর্ভাগ্যবশত, এই মিথ্যার প্রভাব ইতোমধ্যেই ভারতের অভ্যন্তরে অনুভূত হচ্ছে।
দ্য ওয়্যার ইন্ডিয়া রিপোর্ট করেছে, কীভাবে বাংলাদেশে হিন্দু বিরোধী সহিংসতার প্রতিশোধ নিতে ৯ আগস্ট ভারতের গাজিয়াবাদের একটি রেলস্টেশনের কাছে হিন্দুত্ববাদী জনতা একটি ঝুপড়িতে বসবাস করা মুসলমানদের ওপর হামলা করেছিল।
বিভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধ হোক
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা একেবারেই শূন্য নয়। আমাদের দেশে এরকম সহিংসতার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সাধারণত রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত গোষ্ঠী এসব ঘটনা ঘটিয়েছে এবং এটি অবশ্যই সমাধান করা উচিত।
বাংলাদেশে সংঘটিত সর্বশেষ বড় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছিল ২০২১ সালের অক্টোবরে। স্থানীয় হিন্দুরা পবিত্র কুরআন ইচ্ছাকৃতভাবে একটি হিন্দু মন্দিরের ভিতরে রেখেছিল— এমন মিথ্যা অভিযোগ থেকেই শুরু হয়েছিল সাম্প্রদায়িক হামলা।
কিন্তু এটা বোঝা জরুরি যে ৫ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের নতুন তরঙ্গ ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার জন্যই হয়েছে, এমনকি ব্যক্তিগত শত্রুতার ভিত্তিতেও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। টিবিএসের একটি প্রতিবেদনে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া এবং রক্তপাতের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া দেশে একটি মৌলিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে, এখন সতর্কতা, ঐক্য ও ধৈর্য ধরে রাখার সময়।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কেবল বিশৃঙ্খলায় ইন্ধন যোগাবে কারণ দেশটি মেরামত ও সংস্কারের পাশাপাশি নতুন চ্যালেঞ্জের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভারতের গণমাধ্যম বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার দুর্বলতাকে উপলব্ধি করা এবং পুনরুদ্ধারের পথে লোকেদের জন্য আরও দুর্ভোগ না বাড়াতে ভাল করবে।