খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ
পদত্যাগ করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের সচিব এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে দেওয়া পদত্যাগপত্রে তিনি 'ব্যক্তিগত কারণ' উল্লেখ করেন। এর আগে দুপুরে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে পদত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
একই সাথে পদত্যাগ করেছেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। আরও পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলের প্রভোস্টবৃন্দ। এছাড়াও পদত্যাগ করেছেন সিন্ডিকেটের দুইজন সদস্য, শারীরিক শিক্ষা চর্চা বিভাগের পরিচালক, আইকিউএসির পরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক। বিদায়ী রেজিস্ট্রার এসব পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে এক বদলীর আদেশে জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মোঃ মঈনুল হোসেন, উপাচার্যের সচিব সঞ্জয় সাহা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ড. মোঃ হাসানুজ্জামানসহ ১৩ কর্মকর্তাকে তাদের কর্মস্থল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দপ্তরে বদলী করা হয়।
শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ অনেকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীদের দাবি বা শ্লোগান, অবরুদ্ধ রাখা, কার্যালয়ে তালা বন্ধ রাখার মতো ঘটনা ঘটলেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ব্যতিক্রম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়াতে সবাই অত্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলো। কেবল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের চোখে তিনি ছিলেন ক্লিন ইমেজের। তাঁর সাথে উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারও ছিলেন ক্লিন ইমেজের। তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। বলা চলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশেই রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ উপাচার্যের পদত্যাগের খবরে বিশ্ববিদ্যালয় যেনো হতাশার ছায়া নেমে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী ফারহানা ইয়াসমিন আশা উপাচার্যের পদত্যাগের খবরে বলেন, আমি মর্মাহত। কারণ, স্যার এই কোটা আন্দোলন অত্যন্ত সুন্দরভাবে সামলিয়েছেন। তিনি ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করতে দেননি। তিনি যা করেছেন তা আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে করতে পারেনি। তিনি সারাদেশে ভিসিদের মধ্যে উদাহরণ। তিনি খুবই ভালো শিক্ষক, গবেষক। আমি তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি মেনেই নিতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সাদিয়া তো উপাচার্যের পদত্যাগের খবরে কেদেই ফেলেন। তিনি বলেন, আমি তো ভাবতেই পরছি না। স্যার, ওরিয়েন্টেশনের দিনে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং একটি সেশন পরিচালনা করেছিলেন তা আমার জীবনে বড় পাওয়া। আমি কখনও তা ভুলেনি। তাঁর সেই মোটিভেশনাল স্পিচ আমার জীবনের অনেক কিছুই মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। স্যার ভিসি হয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকলেও ক্লাস নিতেন। ঠিক ৯টার এক দু মিনিট আগে ক্লাসে ঢুকতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক প্রফেসর ড. সঞ্জয় কুমার অধিকারী বলেন, উপাচার্য হিসেবে প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ সাইফুদ্দিন শাহ্ বলেন, উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ওবিই কারিকুলা প্রবর্তন, পিএইচডি গবেষণায় গুরুত্ব প্রদানে আমার কর্মমেয়াদে যে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, তিনি সেক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে যোগদান করেন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। এ ছাড়া প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর উপ-উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। ট্রেজারার হিসেবে প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট যোগদান করেন।