নোয়াখালী থেকে বন্যার পানির চাপ; লক্ষ্মীপুরে প্লাবিত নতুন নতুন এলাকা
নোয়াখালীর দিক থেকে লক্ষ্মীপুরে আসছে বন্যার পানি। এতে প্রতি ঘন্টায় জেলার নতুন নতুন এলাকায় প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে শনিবার রাত থেকে রোববার (২৫ আগষ্ট) পর্যন্ত জেলাজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত কোথাও আধা ফুট, আবার কোথাও এক ফুটের বেশি পানির উচ্চতা বেড়েছে। বসতবাড়ি এবং ঘরে কোমর পানি উঠে গেছে।
এই অবস্থায় স্থানীয়রা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। সর্বত্র পানিবন্দী লোকজনের মাঝে হাহাকার দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিতে শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী জেলা থেকে রহমতখালী, ওয়াপদা, ভুলুয়া এবং বিরেন্দ্র খাল হয়ে লক্ষ্মীপুর জেলায় পানি আসে। কিন্তু বর্তমানে নোয়াখালীতে পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে– খাল ছাড়াও মাঠ-ঘাট হয়ে ক্রমে পশ্চিমের দিকে ছুটে আসছে পানি।
লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের বাসিন্দা আলী হোসেন জানান, রহমতখালী, ওয়াপদা ও ভূলুয়া খাল দিয়ে হু হু করে পানি লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। খালসংলগ্ন এলাকাগুলো দ্রুত তলিয়ে গেছে।
রহমতখালী খালসংলগ্ন দিঘলী, মান্দারী ইউনিয়নে হঠাৎ বেড়েছে পানির উচ্চতা। সেখানকার বেশকিছু বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েন।
লক্ষ্মীপুর ফায়ারসার্ভিস উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মাদ আবদুল মান্নান বলেন, রোববার সকালে সাহাপুর গ্রাম থেকে পানিবন্দী থাকা ১৩ জন শিশু ও চারজন নারীকে আমরা উদ্ধার করে সাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। শনিবার রাতে সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নে আটকাপড়া ১০ শিশু, ১৪ জন নারী ও ১০ জন পুরুষকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে রাখা হয়েছে। যেখান থেকে আটকা পড়াদের খবর আসছে, তারা সেখানে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। নোয়াখালীর দিকে থেকেও কিছু পানি ঢুকছে। উপজেলার পূর্বাঞ্চলগুলোর পরিস্থিতি কিছুটা অবনতির দিকে।
এদিকে ভূলুয়া খাল দিয়ে নোয়াখালী থেকে পানি আসায় জেলার কমলনগর ও রামগতি উপজেলার পূর্বাংশ তলিয়ে যাচ্ছে। আগে থেকে ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল। এখন পানির উচ্চতা বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে।
রামগঞ্জ থেকে মাহমুদ ফারুক জানায়, বিরেন্দ্র খাল দিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়া রামগঞ্জের অন্তত ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
জেলার রায়পুর উপজেলা বাসিন্দা এমআর সুমন জানান, রায়পুর পৌরসভাসহ উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরের খালগুলো হয়ে মেঘনা নদীতে নামবে। এদিকের পানি নামার সময় চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী এবং আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে ঢুকে পড়ছে। অন্যদিকে ভারী বৃষ্টিপাতেও পানির উচ্চতা বেড়েছে। শনিবারের রাতে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি জানান, খালগুলো দিয়ে স্লুইস গেট হয়ে পানি মেঘনায় নামছে। তবে নদীতে পানির স্তর এখনও বিপৎসীমার নিচে আছে।