পানি কিছুটা কমলেও দেড় লক্ষাধিক ফেনীবাসী এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে, অনেকে রাস্তায়
বন্যার পানিতে বসত ঘর তলিয়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভাজকে গত চার অবস্থান করছেন ফেনীর বাসিন্দা গোলাপ বেগম।
সদর উপজেলার কসকা বাজারের পাশে ছোট্ট ছাউনিটিতে গাদাগাদি করে গত চার দিন ধরে বাস করছে চারটি পরিবার।
আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এমন অস্বস্থিকর পরিবেশে দিন পার করছেন তারা। পানি কমে গেলে কীভাবে নতুন ঘর তুলবেন তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে পরিবার চারটি।
শুধু গোলাপ বেগম নয়, কসকা বাজার থেকে এক কিলোমিটার উত্তরে গেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই ১২ টি পরিবার গাদাগাদি করে গত ৫ দিন ধরে অবস্থান করছে। গত তিনদিন ওই স্থানে পানি থাকায় অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
জানা যায়, সড়কের পাশে অবস্থান করায় পরিবারগুলো ত্রাণ পেলেও খাবার পানি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে সবাই।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় রবিবার (২৫ আগস্ট) ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় পানি কিছুটা কমে আসলেও, এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন দুর্গতরা। কারণ এখনও বুক সমান পানিতে ডুবে আছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলো।
মহাসড়কের পাশ্ববর্তী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি সেন্টার, নির্মাণাধীন ভবন সবগুলোতে বানভাসীরা আশ্রয় নিয়েছেন।
রবিবার সরেজমিনে ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সড়কের আশপাশের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শত শত গাড়ি ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেলেও, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে পৌঁছাতে পারছেন না তারা।
তবে কিছু কিছু এলাকায় নৌকা, স্পিডবোট নিয়ে বানবাসী মানুষদের নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দিতেও দেখা গেছে কয়েকটি টিমকে।
ফেনীর দুর্গত এলাকার মধ্যে একটি অঞ্চল সিলোনিয়া। এই এলাকায় রবিবার দুপুরে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ফেনী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)সুলতানা নাসরিন কান্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, ফেনীর ছয়টি উপজেলাই বন্যাকবলিত। এসব উপজেলার প্রায় দুই লাখ বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। এদের মধ্যে এখনও প্রায় দেড় লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। দুর্গত এলাকার মধ্যে ফুলগাজী এবং পরশুরাম উপজেলায় পানি কিছুটা কমে এসেছে। এছাড়া ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি এখনও প্রায় অপরিবর্তিত।
মাইজবাড়িয়া এলাকার একজন পোল্ট্রি খামারী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'আমার ফার্মে ৭ হাজার মুরগী ছিলো। একটি মুরগীও বাঁচাতে পাারিনি। আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। ফার্মের সব জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে।'
এদিকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা অনেকেই রবিবার তাদের নিজ নিজ এলাকায় গেছেন বসত ঘর দেখে আসার জন্য। কেউ বুক সমান পানি পাড়ি দিয়ে বাড়িতে যেতে পরেছেন। আবার অনেকেই মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছেন। বাড়ির অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এদিকে পানিবন্দি আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজে তাদের সাথে দেখা করতে গেলেও পানি না কমায় সেখোনে পৌঁছাতে পারছেন না। অনেকেই শুকনো খাবার নিয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে এসেছেন।
এদিকে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে এসেছেন মিানুষ। সড়কে শত শত গাড়ি থেকে ত্রাণ বিতরণ করতে গেছে।
ঢাকা থেকে আসা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ইফাতুল হক শাওন বলেন, 'আমরা ঢাকা থেকে ৬৪ জনের একটি রেসকিউ টিম ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমদের সাথে ১০ জনের একটি মেডিকেল টিম রয়েছে। গত চার দিন ধরে বিভিন্ন উদ্ধার কার্ক্রম পরিচালনা করছি। পশাপাশি ত্রাণ বিতরণও কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য দুর্গম এলাকা থেকে মানুদের উদ্ধার করা।'