আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন ফেনীর বন্যা দুর্গতরা
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ফেনী জেলার ছয়টি উপজেলার অন্তত দুই লাখ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল। বন্যার পানি কমে আসায় আজ (২৬ আগস্ট) সকাল থেকে কিছু কিছু এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বন্যা দুর্গতরা।
ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে বন্যা দুর্গতরা ঘরে ফিরতে শুরু করলেও, বেশিরভাগ এলাকায় এখনো পানি পুরোপুরি সরেনি।
আজ সকালে ছাগলনাইয়া উপজেলার ভোপাল ইউনিয়নের নাঙ্গল মোড়া এলাকায় দেখা যায়, দলে দলে নারী পুরুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরছেন।
ঘোপাল ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত মর্জিনা আক্তার টিবিএস কে বলেন, "ঘরে বুক সমান পানি আসার পর সাঁতরে উদ্ধার কর্মীদের সহযোগিতায় পরবর্তীতে নৌকায় করে আশ্রয়কেন্দ্রে যাই। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ৫ দিন পর সোমবার সকালে ঘরে ফিরে এসেছি। ঘরের সব আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।"
আশ্রয় কেন্দ্রে খাদ্য সামগ্রী পেলেও, ঘরে থাকা খাদ্য সামগ্রী বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় ভবিষ্যতে কি করবেন– তা নিয়ে চিন্তিত মর্জিনা আক্তারের মতোই আরও অনেক বন্যা দুর্গত মানুষ।
ফেনী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুলতানা নাসরিন কান্তা টিবিএসকে জানান, ফেনীর ছয়টি উপজেলাই বন্যা কবলিত। বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় ২ লাখ লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। রবিবার পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিল।
তিনি বলেন, "সোমবার আশ্রয় কেন্দ্র থেকে আরো কিছু লোক ঘরে ফিরে যাচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো দুই এক দিন সময় লাগবে।"
এদিকে বন্যা দুর্গতরা নিজ নিজ এলাকায় ঘরে ফিরলেও সেখানে দেখা যায় এক অবর্ণনীয় চিত্র। বাসা-বাড়িতে এখনো পানি। যেসব ঘর থেকে পানি সরে গেছে, সেসব ঘর পুরোটাই পরিণত হয়েছে ময়লা আবর্জনার স্তূপে। এখন ঘরের বাসিন্দারা এসব আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
ঘরে ফেরা বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এতদিন আশ্রয় কেন্দ্রে মহাদুর্ভোগে দিন পার করলেও ঘর বসবাসযোগ্য করে তুলতে আরো অন্তত দুই একদিন সময় লাগবে। ঘরে খাদ্য সামগ্রী না থাকার পাশাপাশি বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব রয়েছে। এই অবস্থায় কীভাবে দিন পার করবেন– এই নিয়েই অনেকে চিন্তিত আছেন।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম সমন্বয় করার মাধ্যমে সবাই যাতে ঠিকমতো ত্রাণ পায়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা।
ফেনীর ছাগলনাইয়া এবং সদর উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখনো গ্রামীণ সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কিছু কিছু বাড়িতে এখনো হাঁটু সমান পানি। এসব এলাকায় এখন তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েল গুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সংকট আরো তীব্র হয়েছে।
অনেকেরই নষ্ট ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পোল্ট্রি এবং গবাদি পশুর খামার– অবশিষ্ট নেই কিছুই।
ছাগলনাইয়া উপজেলার নাঙ্গলমোড়া গ্রামের বাসিন্দা জেসমিন আক্তার বলেন, "৫ দিন পর আশ্রয় কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরে যাচ্ছি। আমাদের বাড়ির চাল পর্যন্ত পানিতে ডুবে গিয়েছিল। এখনো পুরোপুরি পানি সরে যায়নি। ঘরে গিয়ে কি যে কিছু রান্না করে খাব সেই পরিস্থিতি নেই।"
তিনি আরও বলেন, "পুরো গ্রামের সকলের একই অবস্থা। এই অবস্থায় সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই টিকে থাকা সম্ভব নয়।"