পোশাকখাতের অরাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা
গত রোববার বিজিএমইএ'র শীর্ষ ৮ নেতাসহ ১৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে, অজ্ঞাত আরো ৩০০-৪০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী মো. হাসেন আলী একজন রিকশাচালক, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট আহত হন তিনি। বাদী পেনাল কোডের ৩০৭, ৩২ ও ৩৪ ধারায় উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন। তবে মামলায় যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে জানেন না বলে দাবি করেছেন বাদীর পরিবারের সদস্য।
হা্সেন আলীর স্ত্রী হাসি বেগম বলেন, "আমার স্বামী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক আইনজীবী এসে তার সই নিয়ে যায়। বলে তার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করবে।" তবে এই মামলায় কাদের আসামী করা হয়েছে, কেন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
''গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সে (হাসেন আলী) স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না। তার মুখে গুলি লেগেছিল" - যোগ করেন তিনি।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, রিকশাচালক হাসেন আলী গত ৪ আগস্ট আজমপুর আমীর কমপ্লেক্সের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীর ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে গত ২১ আগস্ট তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়।
''আসামীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা ও নিকট আত্মীয়স্বজনদের সাথে আলোচনা করে, তাদের পরামর্শে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো" - বলে উল্লেখ রয়েছে এজাহারে।
এ মামলায় ব্যবসায়ী নেতাদের আসামী করার বিষয়ে হাসি বেগম বলেন, "আমরা জানি না কারা আসামী। এসব কিছু আইনজীবী ভালো জানে।" ওই আইনজীবীর নাম-পরিচয় বা ফোন নাম্বার কিছু তাদের জানা নেই জানিয়ে তার মন্তব্য, ''ঢাকা শহরে থাকতে হবে বুঝেনই তো, অনেককিছু নিয়ে চলতে হয়।"
মামলার বিষয়ে জানতে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "বাদী ৩-৪ দিন থানায় এসেছেন মামলা করতে। তিনি এনআইডি নিয়ে এসে বলেছে মামলা করবে। আমরা মামলা নিয়েছি।"
বাদী তো কথা বলতে পারেন না তাহলে– কীভাবে এজহারে নাম বলল এমন প্রশ্নে হাফিজুর রহমান বলেন, তিনি এজাহার লিখে এনেছিলেন।
এজাহারভুক্ত আসামীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পোশাক রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। টিবিএসের প্রতিবেদক এজাহার থেকে এমন ৮ জনের নাম শনাক্ত করে– যাদের কোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল ও মিরান আলী, বিজিএমইএ'র পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন খান, মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, মো জাকির হোসেন, সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী সাগর, মো. মহিউদ্দিন রুবেল ও ইমরানুর রহমান।
মেসবাহ উদ্দিন খান সম্প্রতি তৈরি পোশাক খাতের (ওভেন ক্যাটাগরিতে) সেরা রপ্তানিকারক হিসেবে স্বর্রপদক পান।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মিরান আলী টিবিএসকে বলেন, "আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা দেওয়াটা খুবই হাস্যকর। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। কিন্তু কে বা কারা আমার বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছে – তা আমার জানা জানা নেই। মনে হচ্ছে, আমাকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে এবং ব্যবসায়িক সুনাম নষ্ট করার লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলায় বিবাদীগণের মধ্যে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।"
মামলার অপর অভিযুক্ত ও বিজিএমইএ'র পরিচালক ইমরানুর রহমান বলেন, "ছোটবেলা থেকেই আমি ফুটবলের সাথে সম্পৃক্ত, আর ব্যবসা নিয়েই আছি গত ২০ বছর ধরে। কোনো দলের রাজনীতির সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। তবুও কেন এই মামলায় আমার নাম দেওয়া হলো বুঝতে পারছি না।"
বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, "পোশাকখাতে অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যারা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। এরা সবাই অত্যন্ত সুনামে সঙ্গে ব্যবসা করছেন। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না– যে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা দেখছি গত কয়েকদিন ধরে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপি নেতারাও বলছেন কারো নামে হয়রানীমূলক মামলা না নিতে। তারপরেও এমন উদ্দেশ্যমূলক মামলা উদ্বেগজনক।" এবিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এর দ্রুত সমাধান চাইবেন বলেও জানান বিজিএমইএ সভাপতি।