দেশের পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে ঢাকায় শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী পর্যটন মেলা
দেশের পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার আশা নিয়ে রাজধানীতে শুরু হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী পর্যটন মেলা।
আগামী ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হবে ১১তম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার। ব্যবসার মালিক এবং স্টেকহোল্ডাররা আশাবাদী, এই অনুষ্ঠানটি পর্যটন খাতে স্থবিরতার অবসান ঘটাবে এবং গতি ফিরিয়ে আনবে।
এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ারের চেয়ারম্যান ও পর্যটন পত্রিকা পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক মহিউদ্দিন হেলাল আজ (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তারিখ ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, "পর্যটন শিল্পে গতি ফেরাতে বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণকে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে আরও জনপ্রিয় করা এবং আঞ্চলিক পর্যটন শিল্পের সাথে সেতুবন্ধন করাই এই মেলা আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্য।"
এ বছরের আয়োজনে বাংলাদেশ, চীন, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, ভুটান এবং সিঙ্গাপুর সহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০০টি পর্যটন সংস্থা অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের সহায়তায় পর্যটন বিচিত্রা এই মেলার আয়োজন করছে।
মহিউদ্দিন হেলালের মতে, ইভেন্টটি "পর্যটন শিল্পের স্থবিরতা ভেঙ্গে" এবং পর্যটনে উৎকৃষ্ট দেশগুলো থেকে অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের একটি সুযোগ। তিনি বাংলাদেশে হোটেলের উচ্চ খরচের ওপরও জোর দেন।
সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, মেলায় হোটেল, রিসোর্ট বা প্যাকেজ বুকিং-এ বিশেষ ছাড় সহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার থাকবে।
মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইন্স, এয়ারলাইন্স, ট্যুর অপারেটর ও থিমপার্কসহ বিনোদনের আরো অনেক প্রতিষ্ঠান।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিফলন করে হেলাল উল্লেখ করেন, সেক্টরটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয় বিগত সরকার। জুলাই মাসে বিক্ষোভ দমন করার জন্য অস্থায়ীভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করার ফলে পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে কারণ স্টেকহোল্ডাররা ফ্লাইট টিকিট বুক করতে পারেনি। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, স্থবির হয়ে পড়ে সেক্টরটি।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের শাসনভার গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। পর্যটন সেক্টরের ব্যবসায়ী ও সেবাদানকারীরা বলছেন, ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন শান্ত পরিবেশ। দেশে সেই শান্ত পরিবেশে এখন ফিরে এসেছে– এটা দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের জানাতে হবে।
মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, "বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার অধীনে। প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা পর্যটন সেক্টর উন্নয়নের জন্য একটি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। উনি যেভাবে সারা বিশ্বে নন্দিত, বাংলাদেশে বেড়ানোর জন্য তার মাধ্যমে যদি বিদেশিদের আমন্ত্রণ জানানো যায়। এটা পর্যটনের নতুন দরজা খুলে দেবে।"
তিনি বলেন, "প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ও বৈচিত্র্যময় বাংলাদেশ দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকারকে এই সেক্টর উন্নয়নে একটি সর্বজনীন উদ্যোগ নিতে হবে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আন্তরিক প্রচেষ্টা দরকার।"
বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতিকুর রহমানও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, "পর্যটন সেক্টরে সাময়িক স্থবিরতা দেখা গিয়েছে। আমাদের যার যার সেক্টর থেকে এগিয়ে আসতে হবে এই সাময়িক স্থবিরতা দুর করতে। আমরা পর্যটককে সেবা দিতে প্রস্তুত, মেলার মাধ্যমে এই বার্তাটা দেশে ও বিদেশি পর্যটকের কাছে পৌঁছাবে।"
ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দফতরের এসপি (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) মোহাম্মদ বদরুল আলম মোল্লা বলেন, "৫ আগস্ট বাংলাদেশে যে ঘটনা ঘটেছে তা অনেকটা কম্পিউটার রিস্টার্ট করার মতো– বাংলাদেশকে রিস্টার্ট করা হয়েছে। আমরা যারা সিকিউরিটি সেক্টরে কাজ করি, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা নিজেদেরকে ঢেলে সাজাতে চাই।"
মেলায় এক ছাদের নিচে ভ্রমণ সম্পর্কিত সকল প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হবে। হেলাল উল্লেখ করেন, "ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে হোটেল সুবিধা ও ভ্রমণ গাইড — সব ধরনের তথ্য মেলায় পাওয়া যাবে। আমরা দর্শনার্থীদের কাছে পর্যটন শিল্পের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরব।"
দর্শনার্থীরা আকর্ষণীয় প্যাকেজ, ছাড় ও বিভিন্ন অফার উপভোগ করতে পারবেন, যা পর্যটক এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিশেষভাবে তৈরি।
মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, যেখানে প্রবেশ ফি ৩০ টাকা। শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিবন্ধন করে বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারবে। এছাড়াও, অংশগ্রহণকারীরা র্যাফেল ড্রতে অংশ নিয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার জয়ের সুযোগ পাবেন।