হাসিনাকে বিচারের জন্য দেশে ফেরত আনতে হবে: গাজীপুরের শ্রমিক সমাবেশে মির্জা ফখরুল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছেন, এমন মন্তব্য করে তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমি বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কাছে আহবান জানাব, আপনারা অবিলম্বে গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে বিচার করার জন্য ভারতের কাছে চিঠি দিন।
আজ শনিবার গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ীতে এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
গার্মেন্টস শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুষ্কৃতিকারীদের প্রতিরোধ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিক দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, হাসিনা আবার ভারতে গিয়ে বসে রয়েছে। আমরা বারবার ভারতের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেছি, আপনারা একজন গণহত্যাকারীকে জায়গা দিবেন না, যে আমাদের বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, মানুষকে খুন করেছে এবং অনেক গণহত্যার আসামী হয়েছে। তারা এখনো কিছু বলেনি। 'সরকারকে বলছি, শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত আনার যে আইনগত ব্যবস্থা আছে, সেইমত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।'
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, দীর্ঘ ১৪-১৫ বছর শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে। বহু মানুষকে হত্যা করেছে। নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য, প্রধানমন্ত্রী থাকার জন্য– সে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পুলিশ বাহিনীসহ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করেছে। তারা অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে, শ্রমিককে হত্যা করেছে, ছাত্রকে হত্যা করেছে, নারীকে হত্যা করেছে। অকথ্য অত্যাচার করে বাংলাদেশের মানুষকে একটা ভীতির রাজত্বে নিয়ে গেছে। তাই যখন হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পালিয়ে গেছে, তখন এদেশের মানুষ হাফ ছেড়ে বেঁচেছে।
ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছে, এটা ঠিক, কিন্তু তার যে প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে। তারা কিন্তু ভুলতে পারে না। তারা চুরি, লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাম্রাজ্য তৈরি করেছে, বিরাট বিরাট বাড়ি তৈরী করেছে– তারা এটা ভূলতে পারে না। তারা ভাবে, আবার যদি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আানতে পারতাম, তাহলে আবার লুট করতে পারতাম। সেই জন্য তারা দেশের বিভিন্ন জায়গার, বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে।
"তারা সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র করছে, শিল্প এলাকায়। বিশেষ করে আমাদের পোশাক শিল্পে। আমাদের মা-বোনেরা যে পোশাক কারখানায় কাজ করে, সেখানে তারা ষড়যন্ত্র করছে।"
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যে রপ্তানি করা হয়েছে, তার শতকরা ৮৫ ভাগ আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। এ শিল্প থেকে আমাদের বছরে আয় হয় ৪৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আমাদের প্রায় ৫০ লাখ ১৭ হাজার শ্রমিক এ খাতে কাজ করে। তাই এ খাতটাকে নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এখাত নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যারা আমাদের ভালো চায় না, আমাদের এ খাত ক্ষতিগ্রস্থ হলে অন্য যে দেশের লাভ হবে, তারা এ ষড়যন্ত্র করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বন্ধুগণ স্বাধীনতা অর্জন করা যেমন বিরাট কাজ, তেমনি এটা রক্ষা করা আরো কঠিন। এ সময় তিনি অন্তরবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন। বলেন, তিনি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করেছেন। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, আপনারা অল্প সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ গত পনেরো বছরে যে জঞ্জাল সৃষ্টি করেছে, এই জঞ্জালগুলোকে দূর করে একটা সুস্থ পরিবেশ তৈরি করেন। যেখানে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো, তারা একটা নির্বাচন করতে পারবে এবং একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তিনি (ড. ইউনূস) সেটা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। তাকে আমরা সহযোগিতা করছি।
এ সময় মির্জা ফখরুল দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মানুষের প্রতি শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা, ধৈর্য ধরার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা সেভাবেই কাজ করছি। আমরা আশা করব, সরকার সে অনুযায়ী একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করবে এবং সেই পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই, রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের বক্তব্য নিয়ে জনগণের কাছে যেতে পারব, জনগণ সেখান থেকে আমাদেরকে বেছে নেবে।