এডিপির টাকা থেকে অবকাঠামো খাতে ব্যয়ের সুযোগ বাড়ল সিটি কর্পোরেশনের
এখন থেকে সিটি কর্পোরেশনগুলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বরাদ্দ করা অর্থে সেতু, পার্ক, খেলার মাঠ, জলাধার নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো খাতে ব্যয় করতে পারবে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর 'বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় সিটি কর্পোরেশনের অনুকুলে উন্নয়ন সহায়তার অর্থ বরাদ্দ ও ব্যবহার নির্দেশিকা-২০২২' সংশোধন করে অবকাঠামোতে ব্যয় বাড়ানোর এই সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
এতদিন এডিপির টাকায় এসব খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ ছিল না। সিটি কর্পোরেশনকে নিজস্ব বাজেট থেকে এসব খাতে অর্থায়ন করতে হতো।
সংশোধিত নির্দেশিকার আওতায় সিটি কর্পোরেশনগুলোর ব্যয়ের পরিসর আরও বেড়েছে। এর ফলে তারা বৃহত্তর অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারবে।
তবে সিটি কর্পোরেশনের সুবিধা অনুযায়ী ব্যয় কমানোর জন্য এই বরাদ্দ থেকে বিবিধ খাতে ব্যয়ের অংশ ৩ শতাংশ কমানো হয়েছে। একইসাথে এডিপির আওতায় বরাদ্দ করা অর্থ থেকে পানীয় জল বিষয়ে ব্যয় বন্ধ করা হয়েছে।
সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, এডিপির আওতায় বরাদ্দ করা অর্থের ৩০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে।
একইভাবে জনস্বাস্থ্য ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একসাথে করে এ খাতে বরাদ্দের ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আগে জনস্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একসাথে বরাদ্দের অংশ নির্ধারিত ছিল।
এখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা বা জলজট নিরসন ও দূরীকরণে বরাদ্দের ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। এর আগে শুধু জলাবদ্ধতা নিরসনে এডিপিতে বরাদ্দ করা অর্থের ২০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ ব্যয় করতে পারত সিটি কর্পোরেশনগুলো।
পানি ও স্যানিটেশন (পয়ঃনিষ্কাশন) খাতে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থের ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ব্যয় করা যাবে।
তবে যেসব সিটি কর্পোরেশনে ওয়াসা রয়েছে—যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা—ওইসব সিটি কর্পোরেশন এ খাতে বরাদ্দ করা অর্থ জলাবদ্ধতা বা জলজট নিরসন কাজে ব্যয় করতে পারবে। ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা যায়। ভোগান্তিতে পড়েন নাগরিকরা।
এছাড়া জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় সবুজ পার্ক, উন্মুক্ত উদ্যান, সবুজ খেলার মাঠ, জলাধার ইত্যাদি নির্মাণ ও সংস্কারে ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ব্যয় করা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এডিপি থেকে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ কোন খাতে কতটা ব্যয় করা যাবে, সেটি পুনর্বিন্যাস করেছে সরকার। সরকার নিশ্চয় যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের বরাদ্দের বাইরে কোনো খাতে বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন হলে সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব বাজেট থেকে সে বরাদ্দ দেবে। ফলে বরাদ্দ বিভাজনে পরিবর্তন আনায় নাগরিক সেবা বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কোনো সমস্যা হবে না।'
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯-এ সিটি কর্পোরেশনগুলোকে কর আরোপ ও আদায়, বাজেট তৈরি করা এবং নিজস্ব তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
আইনগত কাঠামোর আওতায় সম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনগুলোর আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে প্রতি বছর উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন বাস্তবায়ন ও জরুরি অবস্থা মোকাবিলায়ও সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
আগে সিটি কর্পোরেশনগুলো এডিপির অর্থ সেতু, পার্ক, খেলার মাঠ বা জলাধারের মতো অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করতে পারত না। তবে এ তহবিল তারা রাস্তা, কালভার্ট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশনের কাজে ব্যয় করতে পারত।
সংশোধিত নির্দেশিকার লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়ন সহায়তার ব্যবহারে সম্পদ ব্যবহারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা।
এগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নে নগরকেন্দ্রগুলোর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা প্রতিফলিত করে। এখন দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ শহরে বাস করে এবং নগর জনগোষ্ঠী বৃদ্ধির হার বছরে ২.৫ শতাংশ।
বর্তমানে গ্রামীণ এলাকার চেয়ে নগর অঞ্চলের উৎপাদনশীলতা ৬০ শতাংশ বেশি এবং নগর এলাকার মধ্যে বসবাসরত শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে বসবাস করছে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিটি কর্পোরেশনগুলো দ্রুত বর্ধনশীল নগর জনগোষ্ঠীর জন্য ক্রমবর্ধমান আধুনিক পরিষেবা চাহিদা মেটানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
এসব পরিষেবার মধ্যে রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগর পরিচ্ছন্নতা, জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন এবং স্থানীয় পর্যায়ের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা।
এসব চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সিটি করপোরেশনগুলোকে কার্যকরভাবে সম্পদ আহরণ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
দেশে বর্তমানে ১২টি সিটি কর্পোরেশন রয়েছে। এসব সিটি কর্পোরেশনের জন্য চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এডিপির অংশে উন্নয়ন সহায়তা খাতে ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
এর বাইরে সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ সহায়তা খাতে আরও ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
নতুন নির্দেশিকার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনগুলো অবকাঠামোগত চাহিদা মেটানো এবং নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে আরও বেশি স্বাধীনতা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ পদক্ষেপ দ্রুত নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলায় এবং নগর উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় সিটি কর্পোরেশনগুলোর দক্ষতা বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।