আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে না: ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক হবে না; ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা এমনটাই বলেছেন। একইসাথে সুদহার কমানো, স্থানীয় বাজারে চাহিদা সৃষ্টি, রপ্তানির প্রতিবন্ধকতা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আজ (শনিবার) রাজধানীর মতিঝিল কার্যালয়ে আয়োজিত 'কারেন্ট স্টেট অব দ্য ইকোনমি অ্যান্ড আউটলুক অব বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
তিনি বলেন, "আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, প্রশাসনিক কার্যক্রম, ব্যাংক ঋণের সুদহার, বৈদেশিক মুদ্রার সংকটসহ সামগ্রিকভাবে যে টানাপোড়েন চলছে তাতে অর্থনীতি ছোট হয়ে আসবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না, মূল্যস্ফীতিও কমবে না। এজন্য একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দরকার। যেখানে বিনিয়োগ হবে এবং ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারবেন। আর এ কাজ সরকারকেই করতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের যে দায়িত্ব আছে, সেই দায়িত্বও ব্যবসায়ীদের পালন করতে হবে।"
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, "বর্তমানে কার্যকরী সুদহার ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আগামী মার্চ থেকে একটি কিস্তি পরিশোধ না করলেই সেই প্রতিষ্ঠান খেলাপি হবে।"
তিনি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির উদ্যোগ চান। একইসাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার ও সুদহার কমানোর দ্রুত পদক্ষেপ আশা করেন।
বিকেএমইএর সভাপতি মো. হাতেম বলেন, "ইন্ধন ছাড়া কোন শ্রমিক অসন্তোষ হয় না। ৪০টি খাতে মজুরি নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু একমাত্র তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতির কারণে শ্রমিকরা রাস্তায় নামছে। অন্য খাতগুলোতে কি মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব নেই?"
তিনি বলেন, "ব্যাংক ঋণের সুদ হারের কারণে অনেক কিছু সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। আগামী বছরের মার্চ মাস থেকে একটি কিস্তি পরিশোধ না করলেই খেলাপি করার যে নিয়ম করা হয়েছে তাতে ৯০ শতাংশ ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপি হয়ে পড়বেন। বাংলাদেশ ব্যাংক কেন এই পলিসি নিলো সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। এতে ব্যবসায়ীদের গলা টিপে ধরা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এখন সবচেয়ে বড় সংকট গ্যাস সংকট। এর কারণে সময় মত উৎপাদন করা যাচ্ছে না, এক্সপোর্ট হচ্ছে না। বেশিরভাগ কারখানার বেতন দিতে অসুবিধা হচ্ছে।"
এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, "আমরা ব্যবসায়ীরা ভীষন ইনসিকিউরড ফিল করছি। কালকে কী হবে, কী টেলিফোন আসবে এরকম দুশ্চিন্তায় থাকছেন ব্যবসায়ীরা। আশুলিয়া, গাজীপুরে শুধু ওয়ার্কার অসন্তোষ হয়েছে তা নয়। সেখানে অন্য বিষয়গুলো ছিল। সরকারকে এখন ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করতে হবে।"
তিনি বলেন, "দেশে বর্তমানে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জন্য সুদহার ১৪-১৫ শতাংশ। এসব ধরে বিশ্বের কোথাও কেউ ব্যবসা করে টিকে থাকতে পারে না। সবকিছু ফাইনাল করেও দুটো কোম্পানির এফডিআই আসছে না তারা 'ওয়েট অ্যান্ড সী' নীতিতে আছে।"
তিনি বলেন, "শুধু রেমিটেন্স ও দাতা গোষ্ঠীর টাকা দিয়ে একটা দেশ চলতে পারে না। রপ্তানি আয় ও অভ্যন্তরীণ বাজারকে সচল রাখতে হবে।"
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, "এখন যেকোনো মুল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি পুলিশকে কার্যকর করতে হবে। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি উন্নতি হলেই সব কিছু ঠিক হবে।"
তিনি আরও বলেন, "সুদহার বেড়ে ১৬ শতাংশহয়েছে। এটা কমাতে না পারলে খেলাপি ঋণ বাড়বে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে না। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে ব্যাংকে এলসি খোলা যাচ্ছে না।" তিনি এলসি খোলা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, "আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হতে হবে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে হবে। ব্যাংকের সুদ হার কমানোর জরুরি হয়ে পড়েছে।"
মাস্টার কার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, "আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ট্রাফিক জ্যাম ইত্যাদির কারণে শপিংমলে কেনাবেচা কমে গেছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে জুলাইয়ে ৪০ ভাগ এবং আগস্টে ৩৫ ভাগ ডিজিটাল লেনদেন কমে যায়। সেপ্টেম্বরের সেটা কিছুটা বেড়েছে। তবে সাপ্লাইচেইন এখনো ঠিকমতো কাজ করছে না যে কারণে মূল্য কমছে না।"