ফেসবুকে লাইভে এসে গ্রেপ্তার এড়ালেন আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান
পুলিশ দেখেই ফেসবুকে লাইভ শুরু করে দেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেল। এই লাইভ দেখে আশপাশের অনেকে জড়ো হন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে। স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়েও লোক জড়ো করা হয়। ফলে গ্রেপ্তার করতে এসেও খালি হাতে যেতে হয়েছে পুলিশকে। গতকাল (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তার কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশের সামনে দিয়েই মোটরসাইকেলযোগে ইউপি কার্যালয় ছেড়ে চলে যান সাহেল।
এদিকে, পুলিশের অভিযোগ মসজিদে মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে পুলিশকে মারধর করে চেয়ারম্যানের লোকজন। পুলিশের সংখ্যা কম হওয়ায় তাকে আর গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাব উদ্দিন বলেন, "পুলিশের সাথে খারাপ আচরণ ও হামলার অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেলের বিরুদ্ধে অ্যাসল্ট মামলা করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে"।
তিনি আরও বলেন, "আওয়ামী লীগের ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সদর থানায় নাশকতা ও হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই মামলার প্রেক্ষিতেই জাউয়াবাজার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল"।
যদিও ঘটনার সময় ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে থাকা তার এক অনুসারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "পুলিশ আসার পর চেয়ারম্যান বারবার তাদের কাছে গ্রেপ্তারের কোনো কাগজ আছে কি না জানতে চান। তবে তারা কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি।"
সাহাব উদ্দিন সাহেল, ছাতক পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরীর ভাগনে। তিনি ছাতক উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
গত নির্বাচনের নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশীও ছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নাম সাহেল আহমদ। ওই অ্যাকাউন্টে এখনও সেই লাইভ ভিডিওটি রয়েছে। প্রায় ২০ মিনিট লাইভে পুলিশের সঙ্গে তাকে তর্ক-বির্তক করতে শোনা যায়।
ফেসবুক লাইভে দেখা যায়, একদল পুলিশ সদস্য তার কার্যালয়ে ঢুকে তাকে বের হওয়ার অনুরোধ করছেন। কিন্তু সাহাব উদ্দিন চেয়ারে বসে তাকে গ্রেপ্তারের পক্ষে কোনো কাগজপত্র আছে কি না, পুলিশকে দেখাতে বলছেন। তার সঙ্গে সেখানে থাকা অন্য লোকজনও পুলিশকে কাগজপত্র বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছেন। একপর্যায়ে তিনি সেখানে থাকা লোকজনকে এলাকার মসজিদের মাইকে তাকে ধরে নেওয়ার চেষ্টার বিষয়টি জানিয়ে ঘোষণা দেওয়ার জন্য বলেন। এসময় ঘরের মধ্যে থাকা কিছু লোককে পুলিশের সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায়। প্রায় ২০ মিনিট এভাবে পুলিশের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।
লাইভের শেষ দিকে সাহাব উদ্দিনের পাশে থাকা লোকজনকে বাইরে একটি মোটরসাইকেল প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি শোনা যায়। একইসঙ্গে পুলিশ সদস্যদের যাতে কেউ মারধর না করেন, এটিও বলেন একজন।
এরপর সাহাব উদ্দিন এলাকাবাসীকে লাইভে আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি যেখানেই থাকেন না কেন ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলবে।
একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান তার কক্ষ থেকে বের হয়ে পুলিশের সামনেই মোটরসাইকেলে করে সেখান থেকে চলে যান। লোকজন বেশি হওয়ায় পুলিশ তখন তাকে আর ধরার চেষ্টা করেনি।
এব্যাপারে কথা বলার জন্য সাহাব উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।