ঔষধনীতি হালনাগাদের দাবি চিকিৎসক সংগঠনের, দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য ১৭ দাবি
১৯৮২ সালের ঔষধনীতির মূল কাঠামো ও লক্ষ্য ঠিক রেখে হালনাগাদের দাবি জানিয়েছে ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ (ডিপিপিএইচ)।
সেই সাথে ওষুধের মূল্য ও মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণসহ পরিবেশবান্ধব ও দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ১৭টি দাবি প্রকাশ করেছে দেশের চিকিৎসকদের সংগঠনটি।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন ডিপিপিএইচ এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. শাকিল আখতার।
এসময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, 'পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের সময়ে যেভাবে দলীয়করণের মাধ্যমে বিএমডিসি, বিএমআরসি, বিভিন্ন মেডিকেল ও ডেন্টাল সোসাইটি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল – তার প্রতিকার করতে গিয়ে একটি চিহ্নিত মহল অনেক ক্ষেত্রে একইভাবে নিজ দলীয় ব্যক্তিদের ঢালাওভাবে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা গোটা ব্যবস্থাটি সংস্কারের ক্ষেত্রে কোন সুফল বয়ে আনবে না, বরং সৃষ্টি হবে নতুন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। (তাই) আমরা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্য দিয়ে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার দাবি জানাচ্ছি।'
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এক শ্রেণীর চিকিৎসক দলীয় বিবেচনায় জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশি ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে আহত ছাত্র-শ্রমিক-জনতাকে চিকিৎসা প্রদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এধরনের আচরণ পেশাগত নৈতিকতার গুরুতর লঙ্ঘন। এ বিষয়ে বিএমডিসির পক্ষ থেকে যথাযথ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
তারা আরো বলেন, শুধুমাত্র সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় জেলায় জেলায় করা হয়েছে সরকারি মেডিকেল কলেজ। আবার রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের। এসব মেডিকেল কলেজে্র বেশিরভাগে শিক্ষক, শিক্ষার উপকরণ ও অবকাঠামোর রয়েছে মারাত্মক ঘাটতি। ফলে দেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসার মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আমরা চিকিৎসা শিক্ষা সংকোচনের বিপক্ষে। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু সংখ্যা বাড়ানো নয়, একইসাথে মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্বাস্থ্যের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র পরিবেশ দূষণের কারণে প্রতিবছর দেশে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুর শিকার। বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে— অবিলম্বে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
চিকিৎসকদের ১৭টি দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: স্বাস্থ্যকে জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান এবং আইন ও বিধি দ্বারা তা নিশ্চিত করা; 'সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা' নিশ্চিত করতে জনস্বাস্থ্য ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যাকে প্রাধান্য দিয়ে গণমুখী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা; স্বাস্থ্যখাতে সকল দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ ও স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন গঠন; সরকারি হাসপাতালে ইউজার ফি বাতিল এবং এপর্যন্ত আদায়কৃত ইউজার ফি-এর স্বচ্ছ হিসাব প্রকাশ করা।
এছাড়াও মানহীন মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা; স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধি করা; চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতাল ও রোগীর নিরাপত্তার জন্য রোগী-চিকিৎসাকর্মী বান্ধব সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়বন, এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অভিন্ন চাকরির বিধিমালা ও বেতন কাঠামো প্রণয়ন আর বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি রশিদ ই মাহাবুব ।