৮ দফা দাবিতে চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমাবেশ, ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা
সংখ্যালঘু নির্যাতন বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যাবস্থাসহ ৮ দফা দাবিতে মহাসমাবেশ করছে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকালে নগরীর লালদীঘি মাঠে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হয়। সমাবেশ থেকে একই দাবিতে বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ শেষে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়।
দাবিগুলো হলো— সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য 'দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল' গঠন দোষীদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি প্রদান; ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; অনতিবিলম্বে 'সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন' প্রণয়ন করা; 'সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়' গঠন করা এবং জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন বরাদ্দ রাখা; হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা এবং পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা; 'দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন' প্রণয়ন এবং 'অর্পিত সম প্রত্যর্পণ আইন' যথাযথ বাস্তবায়ন করা; প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রি-হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা; 'সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড' আধুনিকায়ন করা; শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা।
চট্টগ্রাম নগরীর ছাড়াও আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গণসমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন।
গণসমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।
অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, 'কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে, সিরিয়া হবে। সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হচ্ছে বারবার, এ দেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। কারণ সহনশীলতা লুপ্ত হচ্ছে। সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে।'
এসময় শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল। এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা আর নীরব থাকব না। যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ৬ দফা দাবি উঠেছিল, সেই মাঠে বাংলাদেশে সব মঠ মিশনের সাধুরা সমবেত হয়েছেন সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতই নিপীড়ন হবে, আমরা তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। দাবি আদায়ে বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ শেষে আমরা ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করব।'
অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, 'রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনায় জড়িতদের আসামি করুন, বিরোধিতা করব না। কিন্তু বেছে বেছে মামলায় আসামি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল চারটি মূল নীতিতে। আমাদের দলীয় পরিচয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়। হিন্দুদের অস্তিত্বের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা গণতন্ত্রের নামে প্রহসনকে মেনে নেব না। আমরা সংখ্যানুপাতিক হারে সংসদে আসন চাই।'
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন পটিয়া পাঁচরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, আশ্রমের মহারাজ কালিপদ ভট্টাচার্য, শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ তপনানন্দ গিরি মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, কৈবল্যধামের মহারাজ কালিপদ ভট্টাচার্য, স্বামী গোপীনাথ মহারাজ প্রমুখ।