শরণখোলায় এক বছর না যেতেই ভেঙে পড়ছে বেড়িবাঁধ, আতংকে উপকূলবাসী
বাগেরহাটের বলেশ্বর নদীর তীরে সিডরের মতো সুপার সাইক্লোন থেকে উপকূল রক্ষায় নির্মিত টেকসই বেড়িবাঁধ হস্তান্তরের এক বছর যেতে না যেতেই বাঁধের ব্লক ধ্বস, ভাঙন ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেখা দিয়েছে উপকূলবাসীর মধ্যে আতংক। দ্রুত নদী শাসন করে বাঁধ রক্ষার দাবী এলাকাবাসীর। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন বলছে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে শরণখোলা উপজেলা।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট। সরকারি হিসাবে ৯০৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সিডরের আঘাতে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকার। স্বজন হারানো বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ।
এরপর উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন (সিইআইপি) প্রকল্পের অধীনে, মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই নির্মিত বাঁধ ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটকে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু নির্মাণের এক বছর যেতে না যেতেই ৭ কিলোমিটার জুড়ে একাধিক স্থানে ফাটল, ব্লক ধ্বস ও বাঁধের ওপরের মাটির অংশে দুই শতাধিক বড় বড় গর্তে সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন সমর্থনে, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) এর অধীনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের এই বেড়িবাঁধ ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। যেটির ভাঙনে এখন ব্যাপক আতংকে রয়েছেন এ উপকূলের বাসিন্দারা।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের জিলবুনিয়া গ্রামের আব্দুস সালাম বলেন, নদী ভাঙ্গনে বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়েছি। এরপর সুপার সাইক্লোন সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ওয়াপদার বাঁধ। এরপর আমাদের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। কিন্তু এক বছর হয়নি বাঁধের কাজ শেষ হয়েছে। এরইমধ্যে এখন বিভিন্ন স্থানে বাঁধের ওপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বাঁধের ব্লক ধ্বস, ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমরা নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
রায়েন্দা গ্রামের ডালিম বলেন, রায়েন্দা থেকে বগী পযন্ত প্রায় দুই শতাধিক স্থানে বাঁধে বড় বড় গর্ত হয়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নির্মাণের সময় মাটির পরিবর্তে বালু ব্যবহার করায় টেকসই বাঁধের নাজু অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত নদী শাসন করে বাধ রক্ষার দাবী জানান তিনি।
সরেজমিনে দেখা হয় বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী কৃষ্ণেন্দু বিকাশ সরকারের সাথে। এসময় তিনি বলেন, বাঁধের মাটির ওপরের অংশে যেসব স্থানে গর্ত হয়েছে, সেগুলো দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ব্লক ধ্বসে যাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে বাঁধ। আমরা চেষ্টা করছি, নতুন প্রকল্পের মাধমে কাজ করতে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুমার সিংহ বলেন, বাঁধের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। শরণখোলা উপজেলার তিন পাশে নদীবেষ্টিত। নদী শাসন করে দ্রুত বাঁধ রক্ষা না করা হলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এই উপজেলা।
স্থানীয় আরেক অধিবাসী শাহিন হাওলাদার বলেন, ঘুর্নিঝড় রেমালে এই বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তারপরে প্রতিনিয়তই ভাঙ্গনে ধ্বসে পড়ছে ব্লকগুলো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন বন্ধের চেষ্টা করলেও, কোন কাজে আসছে না। নদীতে পানির গভীরতা ৪০ থেকে ৫০ হাতের বেশি। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই না।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বেরুনী বলেন, ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ৭ কিলোমিটার ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় সিইআইপি আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। বেড়িবাঁধের পাশে বড় নদী থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিন দিন নদীর গভীরতা ও স্রোত বাড়ায় ভাঙন সৃষ্টি হয়। ভাঙনরোধে জরুরী ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া গর্তগুলো দ্রুত মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছে। আর নদী শাসনের একটি প্রকল্প প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে ভাঙনরোধে কাজ করা হবে।