নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সজ্জায় চট্টগ্রাম বন্দরের তহবিল থেকে ব্যয় ৪.২৯ কোটি টাকা
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ সজ্জায় আইন লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) তহবিল থেকে চার কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
এছাড়াও ইউনাইটেড কর্পোরেশন নামের একটি সংস্থার সঙ্গে পৃথক দুটি চুক্তি নিয়েও স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, ই-জিপিতে (ইলেক্ট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট বা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে সরকারি ক্রয়) একমাত্র দরদাতা ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
সম্প্রতি পরিবহন অডিট অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ম বহির্ভূত ব্যয়ের বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব ব্যয়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকৌশল বিভাগ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
প্রকৌশল বিভাগের নথি, দরপত্র ও বিলের ভাউচার পর্যালোচনা করে অডিট কর্মকর্তারা দেখতে পান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৮ ও ১৪ তলায় করিডোর, একটি ডেস্ক, প্রদর্শনী অংশ, সাউন্ড সিস্টেম, সভাকক্ষ ও একটি স্মার্ট বোর্ড তৈরিসহ সজ্জার অন্যান্য কাজ করা হয়েছে।
'ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি অ্যান্ড আদার ওয়ার্কস উইথ ক্যামেরা' এবং 'সাপ্লাই অ্যান্ড ইনস্টলেশন অব ভিডিও অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম অ্যান্ড ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন অব দ্য মিনিস্ট্রি অব শিপিং কনফারেন্স রুম' শীর্ষক প্রকলেপর দুটি চুক্তি ইউনাইটেড কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়।
২ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৪৬৩ টাকার এ চুক্তি দুটির জন্য ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) ইস্যু করা হয়েছিল এবং ৩১ অক্টোবর চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
অন্যদিকে ইউনাইটেড কর্পোরেশনের সঙ্গে ১ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার ২৯৫ টাকার আরেকটি চুক্তি হয়েছিল। এ চুক্তির জন্য ২০২২ সালের ১৫ জানুয়ারি এনওএ ইস্যু করা হয় এবং ২০ জানুয়ারি চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। সে হিসেবে সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে মোট ৪ কোটি ২৯ লাখ ৯৭ হাজার ৭৫৮ টাকা দেওয়া হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২২ এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী, বন্দরের তহবিলগুলো থেকে বন্দরের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, আধুনিকীকরণ, ব্যবস্থাপনা, কর্মচারীদের বেতন, সামাজিক সুবিধা ও পরিবেশগত উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা যাবে। বন্দরের তহবিল মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কক্ষ পুনর্নির্মাণ ও অভ্যন্তরীণ সজ্জায় ৫ কোটি ২৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৫ টাকা ব্যয় করা হয়েছে, যা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে নেওয়া।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) সাইফ উদ্দিন আহমদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'সিপিএ থেকে অডিট আপত্তির জবাব দেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।' তবে একই প্রতিষ্ঠানকে দুটি প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।