শুল্ক কমিয়েও চালের আমদানি নেই, আরও ছাড় চায় খাদ্য মন্ত্রণালয়
স্থানীয় বাজারে চালের চড়া দামে ভোক্তার অস্বস্তি দূর করতে শুল্ক কমিয়ে বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমতি দেওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো ব্যবসায়ী আমদানিতে আগ্রহ দেখাননি।
ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহের মূল কারণ প্রতি কেজি চালে আমদানি খরচ পড়বে ৬৫ টাকার বেশি।
এ কারণে দ্বিতীয় দফায় শুল্ক আরও কমিয়ে ৫ শতাংশ চায় খাদ্য মন্ত্রণালয়।
চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাবনার চিঠি খাদ্য মন্ত্রণালয় শিগগিরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেবে বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় চায় শুল্ক কমিয়ে বেসরকারি আমদানি আরও সহজ করতে, যে কারণে দ্বিতীয় দফায় শুল্কছাড়ের প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ বিভাগের পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, 'শুল্ক কমানোর পরও যেহেতু চাল আমদানি হচ্ছে না, তাই এটা আরও একদফা কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে এনবিআরে—যাতে বেসরকারি আমদানি সহজ হয়।'
বেসরকারি আমদানির বাইরে সরকারিভাবে দ্রুত ৫ লাখ টন চাল ও ৭ লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে।
খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ কয়েকটি জেলায় দুই দফা বন্যার কারণে প্রায় ১১ লাখ টন চালের উৎপাদন নষ্ট হয়েছে।
উৎপাদন নষ্টের এই অজুহাতে ব্যবসায়ীরা বাজারে চালের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সরকারি-বেসরকারি আমদানির মাধ্যমে স্থানীয় বাজারকে স্থিতিশীল করতে চায়।
এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয় চালের আমদানিতে মোট করভার ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাবনা দিয়েছিল। কিন্তু এনবিআর বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ৩৫ শতাংশ শতাংশ শুল্কছাড় দেয় গত ২০ অক্টোবর। এনবিআর তখন হিসাব করে জানায়, শুল্কছাড়ের ফলে প্রতি কেজি চাল আমদানিতে ১৪.৫০ টাকা খরচ কমবে।
তবে চালের আমদানিকারক ও খাদ্য মন্ত্রণালয় উভয়ের হিসাব বলছে, ভারত থেকেও যদি সেদ্ধ চাল আমদানি করা হয়, তাহলে প্রতি কেজি চালের খরচ পড়বে অন্তত ৬৫.৯২ টাকা। আর থাইল্যান্ড থেকে আনলে খরচ পড়বে ৭৫.৬৪ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ যোগ করে বাজারজাত করলে তা স্থানীয় বাজারের চালের দামকে ছাড়িয়ে যাবে। ফলে এক সপ্তাহের বেশি সময়েও কোনো ব্যবসায়ী চাল আমদানির আগ্রহ দেখাননি।
এই প্রেক্ষাপটেই এনবিআরের কাছে আরও একদফা শুল্ক কমানোর প্রস্তাবনা পাঠানোর কাজ করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার চিঠি প্রস্তুত করা হচ্ছে, দ্রুতই তা এনবিআরকে দেওয়া হবে।'
তিনি বলেন, 'শুল্ক না কমালে চাল আমদানি হবে না, কারণ বিশ্ববাজারে চালের দাম চড়া।'
২০ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনে চালের ওপর বিদ্যমান মোট করভার থেকে আমদানি শুল্ক (ইমপোর্ট ডিউটি) ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (রেগুলেটরি ডিউটি) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ আগাম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে এনবিআর।
বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাওসার আলম খান টিবিএসকে বলেন, 'মিলগেটে এখন ভালো মানের চালের দাম ৬০ টাকা। বিদেশ থেকে আমদানি করলে যদি তার দাম আরও বেশি পড়ে, তাহলে কেউ আনবে না। আবার কিছুদিন পরই আমন কাটা শুরু হবে, তখন এমনিতেই দাম কমবে।'
তিনি বলেন, 'এসব ঝামেলার কারণে কেউ চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখায়নি।'
সরকার শুধু বেসরকারি আমদানির চেষ্টাই করছে না, সরকারিভাবেও আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি নিয়েছে। প্রথমে টেন্ডারের মাধ্যমে এই চাল আমদানির চেষ্টা করবে। তাতে যদি সাড়া না পায়, তবে জি-টু-জি (সরকারি পর্যায়ে) প্রক্রিয়ায় আমদানির চেষ্টা করবে সরকার।
একইসঙ্গে সরকারিভাবে ৭ লাখ টন গম আমদানিরও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপনন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অভ বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, চিকন চাল কিনতে এখন সর্বোচ্চ ৮০ টাকা পর্যন্ত দাম পড়ছে, যা গত বছরের এই সময়ে ছিল ৭২ টাকা। মাঝারি মানের চিকন চাল টিসিবির হিসাবে গত বছরের তুলনায় ৯.৩৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, যেখানে সর্বোচ্চ মূল্য ৬২ টাকা। তবে ঢাকার বাজারে মাঝারি মানের যেসব চিকন চাল ৫৮-৬৫ টাকায় বিক্রি হতো, সেগুলো এখন ৬৫-৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
একইসঙ্গে মোটা চালের সর্বোচ্চ দাম ৫৫ টাকা যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি বলে টিসিবির তথ্যে উঠে এসেছে।