কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় মিরপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ২
হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় রাজধানীর মিরপুর ১৪-এর কচুক্ষেত সড়কে বিক্ষোভ করছে শ্রমিকরা। তারা বিক্ষোভ করে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলে তাদের গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা।
এদিকে বিক্ষোভে কচুক্ষেত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এছাড়া পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনায় আল আমিন ও রুমা বেগম নামে দুই শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, সেনটেক্স ফ্যাশন লিমিটেডের সুইং অপারেটর আল আমিন হোসেন (১৭) ও ঝুমা আক্তার (১৫)।
সহকর্মী কবির হোসেন জানান, একই এলাকার মৌসুমী নামের একটি গার্মেন্টসের কর্তৃপক্ষ গতরাতে হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ করে দেয়। সেজন্য আজ সকালে কর্মচারীরা কারখানার সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে আশপাশের সব কারখানাও ছুটি দিয়ে দেয়। তখন সবাই এক সাথে রাস্তায় অবস্থান নিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ধাওয়া পালটা ধাওয়া ঘটে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছুড়লে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন।
কবির হোসেন জানান, আলামিনের বাড়ি খুলনায়। বর্তমানে মিরপুর-১৪, বিআরপি এলাকায় থাকে। সকালে কারখানা ছুটি ঘোষণা করলে সে বাসায় যাচ্ছিলো। তখন সে পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়।
আহত ঝুমার বড় বোন মর্জিনা বেগম জানান, সেনটেক্স ফ্যাশনে অপারেটর হিসেবে কাজ করে ঝুমা। তার ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, গুলিবিদ্ধ আহত দুজনকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। এরমধ্যে ঝুমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছুটি দিয়েছে চিকিৎসকরা। তবে আল আমিনের পিঠে গুলি লেগেছে। তার অস্ত্রোপচার চলছে।
অপরদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করলে শ্রমিকরা তাদের ওপর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এসময় সেনাবাহিনীর গাড়ি ও পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয় শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থানে যায়। পুরো এলাকা বন্ধ করে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ভাষানটেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই আমরা রাস্তায় ছিলাম। তবে শ্রমিকরা হঠাৎ করে তাদের আন্দোলন থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাকসুদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তিনি বলেন, "প্রতিবাদকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দিকে ইট-পাটকেল ছুড়লে কিছু পুলিশ সদস্যও আহত হন।" কতজন তৈরি পোশাক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ বা আহত হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, "প্রতিবাদের সময় দুই পক্ষেরই কিছু লোকজন আহত হয়েছে।"