শেয়ার নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ফের চালু
সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (এসআইএসি) সাম্প্রতিক রায়ের পর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয়েছে। এই রায়ের ফলে প্রধান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে।
প্রকল্প নিয়ে বিরোধে তিনটি বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকায় নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
প্রধান শেয়ারহোল্ডার থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (ইতাল-থাই) প্রকল্পের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক। অপরদিকে, দুই চীনা প্রতিষ্ঠান– চায়না শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (৩৪%) এবং সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড (১৫%) যৌথভাবে প্রকল্পের ৪৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে।
২০ অক্টোবর এসআইএসি-এর রায়ে বলা হয়, ইতাল-থাই-এর ৫১ শতাংশ শেয়ার দুটি চীনা কোম্পানির কাছে হস্তান্তরে আর কোনো আইনি বাধা নেই। এই রায়ের পর নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু হয়েছে এবং অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
প্রায় এক বছর আগে এই বিরোধের সূচনা হয় এবং বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর, উভয় দেশেই আইনি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
প্রকল্পের পরিচালক এএইচএম শাখাওয়াত আখতার বলেন, "এসআইএসি-এর রায়ের পর এখন ইতাল-থাই তাদের শেয়ার হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীনা কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে, যাতে প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করা যায়।"
তিনি আরও বলেন, "এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হলে নির্মাণকাজের গতি বাড়বে।আমরা অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ কাজ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।"
কী নিয়ে বিরোধ ছিল?
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১১ সালের এপ্রিলে উদ্বোধন করা হয়। এর নির্মাণব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। শুরুতে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইতাল-থাই কোম্পানি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড গঠন করে। প্রকল্প ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ ইতাল-থাই বহন করে এবং অবশিষ্ট ২৭ শতাংশ অর্থায়ন করে বাংলাদেশ সরকার।
২০১৯ সালে আর্থিক সংকটের কারণে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার কাছ থেকে ৮৬১ মিলিয়ন ডলারের ঋণ নেয় ইতাল-থাই। ঋণের বিপরীতে এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানির শেয়ার চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান শ্যানডং (৩৪%) ও সিনোহাইড্রো (১৫%) এর কাছে বিক্রি করে ইতাল-থাই।
তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ইতাল-থাই ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকগুলো তহবিল স্থগিত করে। এরপর চীনা কোম্পানিগুলো ইতাল-থাইয়ের হাতে থাকা বাকি ৫১ শতাংশ শেয়ারের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে। ফলে, প্রকল্পটি থমকে যায়।
২০২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি চীনা কোম্পানিগুলোর শেয়ার হস্তান্তরের দাবির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে মামলা করে ইতাল-থাই। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারেও (এসআইএসি) অনুরূপ মামলা দায়ের করে।
১৬ মে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করেন এবং ৩০ মে পর্যন্ত শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। পরে এসআইএসি-এর রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত এই আদেশ বাড়ানো হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১ সেপ্টেম্বর ইতাল-থাইয়ের মামলা খারিজ করে এবং অক্টোবরে এসআইএসি-এর রায়ের মাধ্যমে এই আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী সংলগ্ন কুতুবখালীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করে।
২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ উদ্বোধন করা হয়। এর পরদিন দক্ষিণ কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১.৫ কিলোমিটার অংশ জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পরে কারওয়ানবাজার অংশে নামার সংযোগ সড়ক বা ডাউন র্যাম্প খুলে দেওয়া হয় এ বছরের ২০ মার্চ।