‘কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি’: পঞ্চদশ সংশোধনীর মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের ওপর শুনানির সময় হাইকোর্ট বলেছেন, এ মামলায় ন্যায়বিচার পূর্ণরূপে নিশ্চিত করা হবে।
গতকাল (৭ নভেম্বর) শুনানির তৃতীয় দিনে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, 'কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি।'
আদালত আরও বলেন, 'এই মামলা অনেক বড় মামলা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এমন সংশোধনী, যা সংবিধানের অনেক অনুচ্ছেদকে টাচ করেছে। আমরা এই মামলায় এমন রায় দিতে চাই, কেউ যেন বলতে না পারে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়নি। যেটাকে ন্যায়বিচার বলে, এই রায়ের মাধ্যমে সেটাই প্রতিষ্ঠা করব।'
রাষ্ট্রপক্ষকে এই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাবমিশন রাখার পরামর্শ দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, '৫০ বছর পরেও এই রায়ের কথা মানুষ মনে করবে। তখন তারা দেখবে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ভূমিকা কেমন ছিল।'
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের প্রতিনিধি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদ উদ্দিন আদালতে বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণ হয়, রাষ্ট্রের কল্যাণ হয়—এমন বক্তব্যই আদালতে তুলে ধরবে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার (১০ নভেম্বর) দিন ধার্য করেন।
তৃতীয় দিনের শুনানিতে বিএনপির পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সকালে শুনানি করেন। বিকালে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শাহরিয়ার কবির, তিনি সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং অনুচ্ছেদ ৭(খ)-সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু অনুচ্ছেদ নিয়ে যুক্তি তুলে ধরেন।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ধারা ৭ (খ) অনুযায়ী, সংবিধানের কিছু নির্দিষ্ট মৌলিক বিধান 'অসংশোধনযোগ্য'।
আদালতে রুলের শুনানিতে রিটকারী সুজন-এর (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরিফ ভূঁইয়া। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী। ইনসানিয়াত বিপ্লবের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে রুলের দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, এই মামলাটি কোনো পক্ষের নয়, এটি এখন পুরো বাংলাদেশের মানুষের মামলা।
সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও আরও চারজনের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, সরকারকে সেই ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলেন হাইকোর্ট।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাশ হয় ও ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়।
অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধানও যুক্ত করা হয় এ সংশোধনীতে।
এছাড়া আগে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার বিধান থাকলেও ওই সংশোধনীতে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিষয়টি সংযোজন করা হয়।