পঞ্চগড়ে সিপিবির পথসভায় বাধা, মাইক কেড়ে নিয়ে ভাঙা হলো চেয়ার
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পথসভায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে বাধা দেওয়া, ব্যানার ছিনিয়ে নেওয়া, মাইক কেড়ে নেওয়া ও চেয়ার ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা শহরের তেতুঁলতলা এলাকায় 'শোষণ-বৈষম্য বিরোধী গণতন্ত্র জাগরণ যাত্রা'- শীর্ষক পথসভায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ রয়েছে, হযরত আলী নামের এক যুবক নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ছেলে নিয়ে এসে সিপিবির ব্যানার ছিনিয়ে নেন এবং সভায় বক্তব্যরত সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সের মাইক্রোফোন কেড়ে নিতে শুরু করেন।
এছাড়া, তারা সিপিবি নেতাদের ফ্যাসিস্টদের দোসর আখ্যা দিয়ে পথসভায় বাধা দেন। পরে কয়েকজন ছেলে সিপিবি নেতাদের ওপর ফ্যাসিস্টদের দোসরদের নিয়ে সভা করার অভিযোগ এনে তাদের ধাক্কাধাক্কি করেন এবং চেয়ার ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা যায়, এ ঘটনার বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসানাত আব্দুল্লাহকে অভিযোগ দিয়েছেন সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স।
তেতুঁলিয়ায় তাদের কোনো কমিটি নেই বলে প্রিন্সকে জানিয়েছেন হাসনাত।
অন্যদিকে, এ ঘটনার পরে পথসভা শেষ করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান সিপিবির নেতারা। পরে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তার সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লিখেন- ''১২ নভেম্বর ২০২৪। তেতুঁলিয়া পঞ্চগড় এর তেতুঁল তলায় পথসভায় বক্তব্য শেষ করতে পারলাম না। পথসভা শেষ করতে দেওয়া হলো না। ওরা কারা? প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই। সারাদিনের অন্যান্য কর্মসূচি চলবে। ধৈর্যেরও সীমা আছে!!!'
পরে মুর্হুতেই পোস্টটি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যেম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এনিয়ে নেটিজেনদের নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
সিপিবির পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বলেন, 'কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এমন সময় কয়েকজন ছেলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বলেন, আমরা নাকি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম। এতদিন কই ছিলাম। পরে তারা প্রিন্স ভাইয়ের হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়। ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠানে বাধা দেন, চেয়ার ভাঙচুর করেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা তাদের বারবার বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তারা কোন কথাই শোনেনি। পরে পুলিশকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ছেলেগুলো আমাদের ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ ডিলেট করে দিয়েছে।'
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'কয়েকজন ছেলে আমাদের পথসভায় এসে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আমার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা আমাদের লোকজনকে শাসিয়ে বলতে শুরু করেন আপনারা এখানে কি করছেন। তখন আমি তাদের বলি আমার সঙ্গে কথা বল। তারা উচ্চস্বরে চিৎকার-চেঁচামেচি করে ব্যানার কেড়ে নেয়। তবে পুলিশের কোনো ভূমিকা দেখা যায় নি। ওসি উপস্থিত থাকলেও তার ভূমিকা রহস্যজনক মনে হয়েছে। পরে আমরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে আসি। আমরা এটাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব।'
ব্যানার কেড়ে নেওয়া ও বাধা দেওয়ার বিষয়ে হযরত আলী নামের ওই ব্যক্তি বলেন, 'দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের হাতে মানুষ নির্যাতিত। তাদের [আওয়ামী লীগের] কিছু দোসরদের নিয়ে তারা [সিপিবি] পথসভা করছিল। আওয়ামী লীগের লোকজন দেখে স্থানীয়রা তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। পরে আমি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি, সমাধান করি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি কারো ব্যানার ছিনিয়ে নেইনি, পথসভায় বাধাঁও দেইনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র অন্দোলনের সময় তেতুঁলিয়ায় লিড দিয়েছিলাম। তবে তেতুঁলিয়ায় আমাদের কোনো কমিটি নেই।'
তেতুঁলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত কবির বলেন, 'আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম। পথসভা শেষের দিকে কয়েকজন ব্যাক্তি সিপিবি নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিগত দিনে তোমরা আওয়ামী লীগের দোসর ছিলা, দালালি করেছ, আন্দোলনের সময় ছিলানা, এতদিন পরে কোথা থেকে বের হয়েছ। পরে এনিয়ে একটু ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে তারা সবাই চলে গিয়েছে। কে বাধা দিয়েছে তাদের পরিচয় কেউ বলতে পারছেনা।'
তিনি আরও বলেন, 'এ নিয়ে সিপিবির পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি।'